চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ, কী বলছেন ফেসবুকের পাঠকেরা
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে সম্প্রতি সুপারিশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এ বিষয়ে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ সুপারিশ করেছেন। সিদ্ধান্ত কী হবে, সেটি নেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ৩০ এপ্রিল এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত হয়। পাঠকেরা নানা মন্তব্য করেন এ বিষয়ে।
আলোচিত এ বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর ফেসবুকে পেজে ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ আপনি সমর্থন করেন কি?’ শিরোনামে একটি জরিপের পাঠকেরা নানা মন্তব্য করেছেন। ৪ মে প্রকাশিত জরিপে ‘হ্যাঁ, না এবং মন্তব্য নেই’ অপশন ছিল পাঠকের জন্য। ৫ মে রাত পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজার জন নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। কেউ কেউ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এর পক্ষে। কেউ কেউ এটা চান না। যাঁরা চান ৩৫ বছর করা হোক, তাঁরা নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। আর যাঁরা ৩৫ বছর চান না, তাঁরাও নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। পাঠকের ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ এর পক্ষে যুক্তিগুলোর উত্তর (রিপ্লাই) ও পাল্টার উত্তরও (রিপ্লাই) দিয়েছেন অনেকে। এ–সংক্রান্ত কার্ডটি শেয়ার হয়েছে প্রায় ৬৫০ বার। প্রায় ৭০ শতাংশ মন্তব্যকারীই চান সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর করা হোক।
ফেসবুকে করা পাঠকের কিছু মন্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো—
আরিফ শাকিল লিখেছেন, সার্টিফিকেটের কার্যকারিতা সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ করা সমীচীন নয়। তাই বয়সের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া। নিদেনপক্ষে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত ৫ বছর বাড়িয়ে ৩৫ করা উচিত। যেহেতু দেশের গড় আয়ু ক্রমবর্ধমান সেহেতু চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি সময়ের দাবি। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ করা হোক আর অবসরের বয়সসীমাও অন্তত ২-৩ বছর বাড়ানো হোক।
হৃদয় নামের পাঠকের মন্তব্য, ‘পৃথিবীতে কোনো দেশ নেই, যেখানে সবার সরকারি চাকরি হবে বা সরকার দিতে পারবে। আমাদের দেশের সবাই ৩০ বছর অবধি চেষ্টা করেন, না হলে উদ্যোক্তা হন বা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেন। সেখানে ৩৫ বছর করা হলে যখন ৩৫ বছর শেষ হবে, তারপর একটা ছেলে কী করবেন, তাঁর তো কিছু করার সুযোগ থাকবে না। এটা করা হলে অনেক ছেলেই আরও পাঁচ বছর তাঁর পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যাবেন। এমনকি এ ৫ বছর সরকারি চাকরির আশায় থেকে তাঁর সবকিছু হারাতেও হতে পারে।’
মো. তুহিন ইসলাম, মেধার মূল্য কেন ৩০ এ সীমাবদ্ধ থাকবে। শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।
বয়সের বাধা তুলে দেওয়ার পক্ষে রেজোয়ানা জাহান সম্পা। তিনি বলছেন, এতে সরকারি চাকরির জন্য পাগল হওয়া বন্ধ হবে। পাস করে অন্য কিছু করবে। হাতে যেহেতু সময় অনেক পাবে। ভাববে যে সময় তো আছেই সরকারি চাকরির। বেকার তৈরি হবে না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্দিষ্ট বয়সেই সরকারি চাকরি পাওয়ার চাপ তৈরি হবে না।
জাহাঙ্গীর হোসেন, সামরিক বাহিনী বাদে সবল চাকরিরই বয়সসীমা তুলে দেওয়া উচিত।
মো. আসিফ উর রহমানের ভাষ্য, নিয়ম করা উচিত স্নাতক পাসের পর থেকে সাত-আট বছর চাকরি আবেদন করা যাবে। একেকজন একেক বয়সে স্নাতক শেষ করে সেশনজট বা অন্য কারণে। সবার জন্য সমান বয়স দিলে তো ইনসাফ হলো না! বরং স্নাতক ফলাফল দেওয়ার পর ৭-৮ বছর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ রাখা উচিত।
তুষার জুয়েল বলছেন, যদি কেউ যোগ্যতায় ৩০ বছরের কম ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারেন, তাহলে কারও তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।এর সঙ্গে সরকারের আয়ও বাড়ল!
সারাহ তাবাসসুম নকশি, ৩৫–এর মধ্যে বিসিএসে সর্বোচ্চ তিনবার বসতে পারবেন এমন নিয়ম করা হোক।
সাদ্মাম হোসেন বকুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩। তো একটা মানুষ যদি তাঁর জীবনের অর্ধেক সময় চাকরির পেছনেই দৌড়াতে থাকেন, তাহলে তাঁর পরিপূর্ণ জীবন ঠিক কখন গড়ে উঠবে? আর কখনই–বা পরিবারের দায়িত্ব নেবেন? এ ছাড়া কর্মদক্ষতারও ব্যাপার আছে। ৩৫ বছরে গিয়ে একজন এন্ট্রি লেভেলের পদে চাকরিতে ঢুকে তিনি কতটুকু দিতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ না করে বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা উচিত। উদ্যোক্তা সৃষ্টি করার কার্যকর প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত, যার মাধ্যমে তাঁরা সহজে ফান্ড পাবেন। ২৪–২৫ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর শেষ করে যদি আরও ১০ বছর চাকরির প্রস্তুতি নিতেই চলে যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতি এই ১০ বছরের আউটপুট কোথায় থেকে পাবে? এ ছাড়া বেসরকারি খাতকে আরও লোভনীয়, চাকরির নিরাপত্তা, মূল্যায়ন বাড়ানোর ব্যবস্থা করা উচিত। চাকরির পথ একমুখী থাকলে ৩৫ বছরের পরও দেখা যাবে অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন না। তাঁদের জন্য কি ৪০ বছরের আন্দোলন হবে? উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, দেশের সব চাকরিকে যথাযথ মূল্যায়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ব্যবসায় পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিকভাবেও নিজেদের সমৃদ্ধ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা দেশের অর্থনীতি, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা থেকেও একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে।
কৃষ্ণ কুমার শর্মা বলেন, চাকরির কোনো বয়সসীমা রাখাই উচিত নয়। যেকোনো সময় যেন মানুষ চাকরি করতে পারেন, সেটা করলে কেমন হয়?
শাকিল আহমেদের ভাষ্য, ‘কিছুদিন আগেও করতাম না, এখন বয়স ৩৫ সমর্থন করি। করি বলেই যে আমার চাকরি হবে, এমনটাও আশা করিনি। ১২ বছরেও যা পারিনি, ৫ বছরে তা পাব, এমনটাও আশা করি না। তবে অনেকেরই কাজে লাগবে এ সময়টা। তবে আমাদের দেশে চাকরিপ্রত্যাশীর চেয়ে চাকরির পদ কম, তাই এখানে প্রতিযোগিতা বেশি। সবাই এভাবে শুধুই চাকরির পেছনে না ছুটে অন্য পথ দেখলে ভালো হয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের অন্য কাজও শেখা উচিত, যা আমার ভবিষ্যতের জন্যই ভালো।’
পূর্ণিমা রায় বলেন, ‘আমাদের জন্য হতাশা! তবে নতুনদের জন্য অবশ্যই করতে হবে?’
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘৩২ বছরকে সমর্থন করি। ৩৫ অনেক বেশি হয়ে যায়।’
সজীব ফয়সাল বলেন, ৩৫ হলে অনেক তরুণ–তরুণী ৩৫–এর আগে বিয়ে করতে চাইবেন না। এতে জাতি পিছিয়ে পড়তে পারে।
তালুকদার মো. আবু জোবায়ের বলেন, একজন মানুষ যদি শুধু সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতেই ৩৫ বছর শেষ করেন আর এরপর চাকরি না পান, তবে তাঁর কোয়ালিটি টাইম হারাবেন। শুধু প্রস্তুতি নিতেই জীবনের অনেক সময় চলে যাবে, জীবন গড়তে নয়। এতে বেকারত্ব আরও বাড়বে। দেশে কিন্তু সরকারি চাকরি ছাড়াও মানুষ ভালোভাবে বেঁচে আছেন। শিক্ষা জ্ঞান বাড়ানোর জন্য, শুধু চাকরির প্রস্তুতির জন্য নয়।
আল মাসউদ খান বলেন, এখন নাকি অনেক শিক্ষার্থী অনার্স শেষ হওয়ার আগেই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এতে ক্লাসের পড়ালেখা উপেক্ষিত হয়। কাজেই বিষয়টি ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।
জে এইচ নাইম বলেন, ‘যে ৩০–এ পারে নাই, সে ৩৫ এও পারবে না।’
মতিন মোহাম্মাদ বলেন, ‘আমি মনে করি, চাকরির বয়স ৩৫ নয়, ৩২ করা যৌক্তিক। কারণ, যেহেতু আমাদের চাকরির ক্ষেত্র সীমিত। সেহেতু একজন নাগরিক যদি জীবনের পুরো ৩৫ বছর যদি দৌড়ে কাটিয়ে দিয়ে ব্যর্থ হন, তাহলে বাকি সময়টায় তিনি কী করবেন? না জোগাতে পারলেন একটা চাকরি, না করতে পারলেন বিয়ে। এমতাবস্থায় নতুন করে তিনি যদি ব্যবসার কথা চিন্তা করেন, তাহলে তাঁরা হতাশ হবেন। তাই আমি চাই না হতাশাগ্রস্ত নাগরিকের সংখ্যা বাড়ুক।’