জার্মানি কেন উচ্চশিক্ষার জন্য পছন্দের শীর্ষে
ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ জার্মানি। তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষাব্যবস্থায় ইউরোপের শীর্ষে রয়েছে দেশটি। ‘দ্য ল্যান্ড অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ খ্যাত দেশ জার্মানিতে খুব সহজেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সহজ আবেদনপ্রক্রিয়া ও দ্রুততম সময়ে ভর্তির সুবাদে বর্তমানে অনেকের পছন্দের গন্তব্য জার্মানি।
দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী। রয়েছে বিশ্বের অনেক স্বনাধন্য বিশ্ববিদ্যালয়। হাতে গোনা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কোর্স ব্যতিত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয়, যা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম বেনিফিট হিসেবে ধরা যায়।
জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি–বেসরকারি বেশ কয়েকটি স্কলারশিপের সুবিধা আছে। এর মধ্যে ডাড স্কলারশিপ অন্যতম। অন্যান্য স্কলারশিপগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইরাসমুস প্লাস, আইনস্টাইন ইন্টারন্যাশনাল ফেলোশিপ, হামবোল্ট রিসার্চ ফেলোশিপ, হেনরিখ বোল স্কলারশিপ, কোনার্ড অ্যাডেনাওয়া স্টিফটুং স্কলারশিপ, কুর্ত হ্যানসেন সাইন্স স্কলারশিপ ইত্যাদি। আরও আছে সেমিস্টার ওয়াইজ বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা। রয়েছে অন-ক্যাম্পাস চাকুরির সুযোগ।
এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করে খুব সহজেই নিজের থাকা-খাওয়াসহ পারিবারিক সাপোর্ট দিতে পারেন। অধিক দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা সহজেই ম্যানেজ করতে পারেন ফুল টাইম চাকরি ও ব্লু কার্ড। আর পড়ালেখা শেষে সুন্দর ক্যারিয়ার কিংবা স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ তো আছেই।
আর যাঁরা ঘুরতে ভালোবাসেন, উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি তাঁদের অন্যতম সেরা পছন্দের। কারণ, একবার স্টুডেন্ট ভিসা পেলে তিনি শেনজেনভুক্ত ২৬টি দেশে ঘুরতে পারবেন এই ভিসাতেই।
একাডেমিক সেশন
জার্মানিতে সাধারণত দুটি সেশনে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। একটি হলো উইন্টার (যা সাধারণত অক্টোবর- মার্চ) এবং অন্যটি হলো সামার (যা সাধারণত এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)। দেশটি এই দুই সেশনে ভর্তি নিয়ে থাকে। ভর্তির আবেদন সাধারণত ক্লাস শুরুর তিন থেকে চার মাস পূর্বেই সম্পন্ন করতে হয়। জার্মানিতে পড়ালেখা কিংবা ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায় এই www.daad.de/en ওয়েবসাইটে।
একাডেমিক ডিগ্রিগুলো
কোনো শিক্ষার্থী যদি উচ্চমাধ্যমিক পাস করে জার্মানিতে স্নাতকপর্যায়ে পড়তে যেতে চান তাহলে তাঁকে স্টুডেন্টকলিগ (StudienKolleg) করতে হয় এবং ইনট্রান্স পরীক্ষায় নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর পেয়ে ভর্তি পেতে হয়। অন্যথায় দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলরে ভর্তি হয়ে মোট ক্রেডিটের ২৫ শতাংশ সম্পন্ন করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য আবেদন করতে হয়।
আর মাস্টার্সে আবেদনের জন্য থাকতে হবে মোটামুটি ভালো ফলাফলসহ ব্যাচেলর ডিগ্রি। উল্লেখ্য, দেশে অধ্যয়ন শেষ করা ডিপ্লোমা কিংবা ডিগ্রি পাস করে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই। তবে ডিপ্লোমা হোল্ডাররা দেশে ব্যাচেলর শেষ করে জার্মানিতে মাস্টার্সে আবেদনের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া রয়েছে মাসিক ভাতাসহ পিএইচডি/ ডক্টরালের সুযোগ। আরও রয়েছে আউসবিল্ডুং (Ausbildung) প্রোগ্রাম, যা পেইড ইন্টার্নশিপের মতো। মাসিক ভাতার সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি অভিজ্ঞ হওয়ার অন্যতম সুযোগ এটি, তবে এ ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার জন্য সাধারণত আইইএলটিএসের প্রয়োজন হয়। তবে ‘মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন ইন ইংলিশ (MOI)’ সার্টিফিকেট থাকলেও অনেক কোর্সে অ্যাডমিশন পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, কেউ যদি MOI দিয়ে অ্যাডমিশন পেয়ে যান, তবুও তাঁর আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর প্রয়োজন হবে ভিসাপ্রাপ্তির জন্য। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন স্কোর কত লাগবে, তা এম্বাসির ওয়েবসাইট www.dhaka.diplo.de থেকে জানা যাবে।
অধ্যয়নের বিষয়গুলো
জার্মানিতে প্রায় ৪০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ হাজারের বেশি কোর্স পড়ানো হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো—জেনারেল ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ল, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট, লিডারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইনফরমেশন টেকনোলজি, এইচআরএম, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং, ডাটা অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, পলিটিক্যাল সায়েন্স, অ্যাডভান্সড ম্যাটারিয়ালস, অ্যাডভান্সড অনকোলজি, ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন টেকনোলজি, এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ফিন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট, মলিকিউলার সায়েন্স, বিভিন্ন ভাষা বিষয়ে পড়াশোনা, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার সায়েন্স ইত্যাদি।
হাজারো সুবিধা থাকা সত্ত্বেও করোনা মহামারির শুরু থেকে অদ্যাবধি একটি সমস্যা সবাইকেই ফেস করতে হচ্ছে, তা হলো ভিসাপ্রাপ্তির দীর্ঘ সময়! জার্মান দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ সংকট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি, দ্রুত সব সমস্যা সমাধান হবে।
লেখক: মো. শামসুল আকরাম (সুমন), শিক্ষার্থী, মাস্টার অব ইঞ্জিনিয়ারিং, বার্লিনার হোকসুলে ফুর টেকনিক, বার্লিন, জার্মানি।