পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রোষানলে’ পড়ে শিক্ষক বরখাস্ত হওয়ার অভিযোগ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে ‘সোচ্চার’ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ার অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষক। তাঁর অভিযোগ, সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ তুলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা আছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত চলছে।
অভিযোগকারী শিক্ষকের নাম মো. মেহেদী হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় এ অনিয়ম কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। চলতি বছর এ–সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুরোনো বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। এ ঘটনায় গত মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পোস্টার টানানো হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবি ওঠে। এ পোস্টার লাগানোর ঘটনায় শিক্ষক মেহেদী হাসানকে অভিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মে মাসে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বিধিমালা ভঙ্গের কথা উল্লেখ করলেও কী অভিযোগ, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
মেহেদী হাসানের অভিযোগ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের ঘটনার বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অপরাধের বিচার না করে উল্টো মিথ্যা অভিযোগে তাঁর বিচার করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আমার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আগেই পোস্টার বিতরণের অজুহাতে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেওয়া বড় অন্যায়
গত ৩০ নভেম্বর মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসুর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি তখন বলেন, ওই কাজের (অভিযোগ) সঙ্গে ওই শিক্ষক (অধ্যাপক মেহেদী) সম্পৃক্ত। যাঁকে দিয়ে এটি করিয়েছেন তাঁর ভাষ্যও আছে। এ বিষয়ে থানায় জিডি করার পর আদালতে তদন্তের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
সন্তোষ কুমার বসু আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তদন্ত কমিটির কাজ চলমান। এ অবস্থায় ওই শিক্ষক আদালতের রেফারেন্স দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। আমি এ আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথাও বলেছি। উপাচার্য বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেছেন, ওই পোস্টার টানানোর সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন। ওই পোস্টারের ঘটনায় গত ২০ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে নিরাপত্তা কর্মকর্তা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। কিন্তু পরে জুন মাসে অভিযোগের সত্যতা প্রতীয়মান না হওয়ায় জিডির বিষয়ে তদন্ত করার আবেদন আদালত নামঞ্জুর করেন। এর মধ্যে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুনির্দিষ্ট জবাবও দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য বিবৃতি দিয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় এ অনিয়ম কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। চলতি বছর এ–সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুরোনো বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। এ ঘটনায় গত মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পোস্টার টানানো হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবি ওঠে।
উল্লেখ্য, মেহেদী হাসান নিজেও সরকার সমর্থক শিক্ষকদের একাংশের প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতিতে নির্বাচিত সদস্য।
ওই শিক্ষক আরও বলেন, আদালতের আগের রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছিল। কিন্তু আদালত গত অক্টোবরে রিভিউ আবেদনটিও নামঞ্জুর করেন এবং আগের আদেশ বহাল রাখেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তদন্ত কমিটির কাজ চলমান। এ অবস্থায় ওই শিক্ষক আদালতের রেফারেন্স দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। আমি এ আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথাও বলেছি। উপাচার্য বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অধ্যাপক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আগেই একজন অধ্যাপককে পোস্টার বিতরণের অজুহাতে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেওয়া বড় অন্যায়। শিক্ষক সমিতি আমার পক্ষে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে এবং বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশও আমার অনুকূলে রয়েছে। তারপরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না।’
মেহেদী হাসান গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে লেখা আবেদনে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করেন। তবে শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ওই আবেদন মঞ্জুর হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষক।