স্যাট, কী ও কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

ফাইল ছবি

বিদেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে আগ্রহী অনেকেই। তাঁদের জন্য স্যাট (Scholastic Assessment Test-SAT) গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। এ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার প্রস্তুতি যাচাই করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের সঙ্গে স্যাট স্কোর জমা দিতে হয়। এ ছাড়া শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার জন্য স্যাট পরীক্ষার স্কোরও কাজে দেয়। বিদেশে স্নাতক পড়তে যাওয়ার জন্য স্যাট দিতে হয়। কেবল ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে বলা থাকলেই তখন স্যাট স্কোর জমা দিতে হবে। স্কলারশিপ পাওয়ার জন্যও স্যাট স্কোর গুরুত্বপূর্ণ।

স্যাট পরীক্ষা যাচাই করে যে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কতটুকু তৈরি হলো। বাংলাদেশের ৫টি জায়গায় স্যাট পরীক্ষা হয়ে থাকে। এগুলো রাজধানী ঢাকায় ও চট্টগ্রামে অবস্থিত। সাধারণত মার্চ, মে, আগস্ট, অক্টোবর এবং ডিসেম্বরে স্যাট পরীক্ষা হয়ে থাকে। স্যাটের বিকল্প হিসেবে এসিটি স্কোর অনেক জায়গায় গ্রহণ করা হয়। এটাও অনেকটা স্যাটের মতোই পরীক্ষা।

যাঁরা বিদেশে স্নাতক পড়তে চান, তাঁদের এ পরীক্ষা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে এসএসসির পর বা উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থাতেই স্যাট দিতে পারবেন। একজন শিক্ষার্থী যতবার ইচ্ছা ততবার এ পরীক্ষা দিতে পারেন। তবে স্যাট কিন্তু খরুচে একটা পরীক্ষা। তাই প্রথমবারই ভালোমতো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়াই ভালো। সায়েন্স, কমার্স ও আর্টসের সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্যাট পরীক্ষা দিতে পারবেন। যতবার ইচ্ছা এ পরীক্ষা দেওয়া যায়।

স্যাটের মোট নম্বর ২৪০০। Critical reading, math ও writing এই তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের স্যাট পরীক্ষাকে। প্রতিটি সেকশনে ৮০০ নম্বর থাকবে। স্যাট পরীক্ষায় সর্বনিম্ন স্কোর ৬০০ এবং সর্বোচ্চ স্কোর ২৪০০। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনের জন্য কোনো ন্যূনতম স্কোরকে আবশ্যক হিসেবে উল্লেখ করা হয় না, তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্কোর ২০০০ থেকে ২৪০০-এর মধ্যে হয়ে থাকে।

৩টি সেকশন হলো—

*ম্যাথমেটিকস

এই সেকশনের তিনটি সাব সেকশন আছে। ২টি ২৫ মিনিট করে আরেকটি ২০ মিনিটের।

প্রথম সাব–সেকশন: ২৫ মিনিটের এই সাব-সেকশনে শুধু Multiple Choice–এ ভরা। ২০টা MCQ–এর মতো প্রশ্ন থাকবে; কিন্তু প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য নেগেটিভ মার্কিং থাকবে।

দ্বিতীয় সাব সেকশন: ২৫ মিনিটের এই সেকশনে ৮টা এমসিকিউ (MCQ) ও ১০টা GRID-IN টাইপ প্রশ্ন থাকে। এখানে কোনো নেগেটিভ মার্কিং নেই।

তৃতীয় সাব সেকশন: ২০ মিনিটের এই সেকশনে ১৬টা প্রশ্ন, সবগুলোই এমসিকিউ।

*ক্রিটিক্যাল রিডিং

এখানেও তিনটি সাব–সেকশন আছে। দুটি ২৫ মিনিটের এবং একটি ২০ মিনিটের। প্রতিটি সেকশনে Sentence Completion (শূন্যস্থান পূরণ—একটি গ্যাপ, পাঁচটি অপশন, একটি সঠিক উত্তর বাছাই করতে হবে) এবং Reading Comprehension (প্যাসেজ থাকবে এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রশ্নের উত্তর করতে হবে)।

*রাইটিং

এখানে চার রকম ভাবে প্রশ্ন করা হবে—

Identification of Sentence Errors: এটাতে একটি লাইনের পাঁচ জায়গায় আন্ডারলাইন করা থাকবে এবং কোনটার মধ্যে ভুল আছে (গ্রামাটিক্যাল মিসটেক) খুঁজে বের করতে হবে।

Sentence Correction: এটি আগেরটির মতোই কিন্তু এখানে আন্ডারলাইন করা থাকবে এক জায়গাতেই এবং আন্ডারলাইন করা জায়গাটা পাঁচ রকম করে বলা থাকবে। সঠিক কোনটি সেটি বাছাই করতে হবে।

Editing in Context: একটি পুরো প্যাসেজ পড়তে হবে। সেই প্যাসেজের মধ্য থেকে কিছু লাইন বা শব্দ দেখিয়ে জানতে চাইবে—ওই শব্দ বা লাইন ব্যবহার না করে কোন শব্দ বা লাইনটি ব্যবহার করলে বেশি ভালো হবে। অপশনও দেবে, সেখান থেকে সিলেক্ট করতে হবে।

Essay Writing: কোনো বিষয়ের ওপর রচনা লিখতে দেবে এবং কোন জিনিসগুলো থাকতে হবে রচনার মধ্যে তা বলে দেবে।

কোথায়, কীভাবে পরীক্ষা

স্যাট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রথমেই স্যাটের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। স্যাটের আবেদন ফি সব মিলিয়ে প্রায় ১০১ ডলার। তবে প্রায়ই ফি হালনাগাদ করা হয়। তাই স্যাটের ওয়েবসাইট থেকে সঠিক তথ্য জেনে নিতে হবে। পরীক্ষা দেওয়ার কমপক্ষে এক মাস আগে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা জরুরি। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন হবে পাসপোর্ট এবং পিপি ছবির ডিজিটাল কপি। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে পাসপোর্ট ছাড়া অন্য কোনো ধরনের শনাক্তকারী পরিচয়পত্র গ্রহণযোগ্য নয়।

রেজিস্ট্রেশন করার পর ওয়েবসাইট থেকে যে প্রবেশপত্র দেওয়া হবে তাতে পরীক্ষার দিন, সময় ও কেন্দ্র উল্লেখ করা থাকবে। পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় আরও কী কী নিয়ে যেতে হবে তা–ও বলা থাকে প্রবেশপত্রে। এবারের পরীক্ষা আগামী ২৪ আগস্ট হওয়ার কথা।

প্রস্তুতি

যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি। বছরের বিভিন্ন সময়ে স্যাট পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাই নিজের প্রস্তুতি অনুসারে সময় নির্বাচন করা ভালো। শুরুতেই স্যাট-বিষয়ক বইগুলো থেকে একটি প্র্যাকটিস টেস্ট দিয়ে নেওয়া ভালো। এরপর প্রাথমিক স্কোর বুঝে পরবর্তী প্রস্তুতির পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। স্যাটে ভালো স্কোর করার জন্য কোচিংয়ে দৌড়াতেই হবে এমনটি নয়। চাইলে ঘরে বসেও অফিশিয়াল স্যাট স্টাডি গাইড, ব্যারন’স, প্রিন্সটন রিভিউ, কাপলান, গ্রুবার’স, ম্যাকগ্র-হিল ইত্যাদি বইয়ের সাহায্য নিয়ে স্যাট পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করা যায়।

সহায়ক বইয়ের পাশাপাশি দরকার হবে নিয়মিত অনুশীলন ও অধ্যবসায়। যেহেতু পরীক্ষাটির সব প্রশ্নই ইংরেজিতে করা হয়ে থাকে, তাই স্যাটে ভালো স্কোর করতে হলে ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। এ জন্য সহায়ক বইগুলোর ইংরেজি অংশ অনুশীলন ছাড়াও নিয়মিত ইংরেজি বই ও ইংরেজি খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।