অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দুঃসংবাদ, স্টুডেন্ট ভিসায় বাড়ল ব্যাংক ব্যালান্স
বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষেই থাকে অস্ট্রেলিয়া। প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ উচ্চশিক্ষা এবং কাজের উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমায়। এর ফলে দিন দিন দেশটির জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার ধাপগুলো কঠোর করছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এ জন্য আবারও শিক্ষার্থী ভিসার (স্টুডেন্ট ভিসা) নিয়মে পরিবর্তন আনছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার।
গতকাল বুধবার (৮ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সঞ্চয়ের পরিমাণ আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা পেতে অর্থ জমা রাখার পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। বুধবার দেশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, ভিসা পেতে শিক্ষার্থীদের এখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ২৯ হাজার ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জমা দেখাতে হবে। আগে ২৪ হাজার ৫০৫ অস্ট্রেলীয় ডলার ব্যাংক ব্যালান্স দেখাতে হতো। গত সাত মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য ন্যূনতম ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ দ্বিতীয়বারের মতো বাড়ল।
এ ছাড়া কয়েকটি কলেজকে শিক্ষার্থী ভর্তিতে প্রতারণামূলক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে। এর আগে গত মার্চে শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়।
২০২২ সালে করোনা মহামারির বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর দেশটিতে অভিবাসীরা যেতে থাকেন। এতে দেশটিতে বাসা ভাড়া অনেক বেড়ে যায়। চাপ বাড়ে সরকারের ওপর। তাই অভিবাসী নীতি কঠোর করার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। এ লক্ষ্যে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়ম কঠোর করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয় অস্ট্রেলিয়া। এ বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়া সরকার এক ঘোষণায় জানায়, স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে এবার থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে আরও বেশি রেটিং পেতে হবে। সেই সঙ্গে দেশটিতে থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে সেটি আরও বেশি যাচাই-বাছাই করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল বলেছেন, ভুয়া শিক্ষার্থী নিয়োগের অভিযোগ আসা ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সতর্কীকরণ চিঠি পাঠানো হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের দুই বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের ভর্তির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হতে পারে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষা খাতে অসৎ ও প্রতারক নিয়োগদাতাদের কোনো স্থান নেই। গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ফলে এই খাতে অসৎ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দেওয়া যাবে—যারা মানুষকে শোষণ এবং আমাদের দেশের শিক্ষা খাতের সুনাম নষ্ট করতে চায়।’
আন্তর্জাতিক শিক্ষা খাত অস্ট্রেলিয়ার আয়ের অন্যতম খাত। ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে এ খাতের মূল্যমান ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বেশি শিক্ষার্থী যাওয়ায় এমনটা ঘটেছে। এই অভিবাসনের ফলে বেড়েছে বাড়িভাড়া। অভিবাসীদের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ জনে। সরকার আশা করছে, তাদের নেওয়া নীতি আগামী দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারবে।