কানাডায় ২ বছরের বিধিনিষেধে কমবে ৩৫ ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থী, বাংলাদেশিদের জন্য করণীয়

কানাডায় ২ বছর বিদেশি শিক্ষার্থী কম নেবেছবি: সংগৃহীত

রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী আসা এবং এর ফলে দিন দিন আবাসনসংকট তীব্র হওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করছে কানাডা। গতকাল সোমবার (২২ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ওপর দুই বছরের জন্য একটি ক্যাপ (বিধিনিষেধ) ঘোষণা করেছে। দেশটি বলছে, এ সময়ের মধ্যে কিছু স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের কাজের অনুমতিপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) দেওয়া বন্ধ রাখা হবে। কানাডার অভিবাসন মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রবেশ অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত বছর ২০২৩ সালে যতসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, শতকরা হিসাবে এ সংখ্যা তার চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম।

কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার
ছবি: সংগৃহীত

তবে এই বিধিনিষেধ স্থায়ী নয়। কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার গতকাল বলেছেন, ২০২৪ সালে কানাডা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনবে। আগামী দুই বছর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা জারি থাকবে। এ সংখ্যা আগামী দুই বছরের জন্য প্রতিবছর হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ২০২৩ সালের চেয়ে প্রায় ৩৫ ভাগ কম হবে। কানাডার ক্রমবর্ধমান বাসস্থান-সংকটের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, নতুন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে কাজ করবে অটোয়ায় আসীন কেন্দ্রীয় সরকার।

২১ জানুয়ারি কানাডার মন্ট্রিয়লে শুরু হওয়া টানা তিন দিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার এ ঘোষণা দেন। এ বৈঠকে জাস্টিন ট্রুডো তাঁর মন্ত্রীদের ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসেছেন। কানাডার ১০টি প্রদেশ ও ৩টি টেরিটরিকে কয়েক দিন আগেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার কথা জানানো হয়েছিল। তবে কোনো প্রদেশ ও টেরিটরিতে কতজন করে বিদেশি শিক্ষার্থী আনতে পারবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। শিগগিরই তাদের বর্তমান শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হিসাব করে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন সংখ্যা জানিয়ে দেবে প্রদেশগুলোকে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
ছবি: রয়টার্স

কানাডার প্রাদেশিক সরকারগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে তাদের প্রদেশের জন্য নির্ধারিত সংখ্যা পাওয়ার পর প্রদেশের কলেজ ও ইউনিভার্সিটিগুলোর সঙ্গে বসে প্রতিটির জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ঠিক করবে। এ বিষয়ে মার্ক মিলার বলেছেন, কিছু কিছু প্রদেশে প্রায় ৫০ ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাবে। তবে এখন যাঁরা কানাডায় পড়াশোনা করছেন, তাঁদের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে যদি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাঁরা এ সংখ্যার ক্যাপের আওতায় পড়বেন না। এর পাশাপাশি কানাডায় নতুন গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রাইভেট ছোট-ছোট কলেজগুলো থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কমিয়ে আনার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব কলেজের বিরুদ্ধে পড়াশোনার নিম্নমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আনার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাস্টার্স ও তার ওপরের লেভেলের, যেমন পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেট শিক্ষার্থীদের স্বামী বা স্ত্রীকে (স্পাউস) শুধু ওপেন ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হবে। অন্য স্পাউসদের ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয় কী—

১.

বাংলাদেশ থেকে যাঁরা পড়তে আসবেন, তাঁদের আসার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্টারিও ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা অনেক থাকবে, তাই আপনারা এই প্রদেশ দুটি বাদে অন্য জায়গায় চেষ্টা করতে পারেন;
২.

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে খোঁজখবর নিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেছে নিতে হবে;

৩.

যাঁরা পড়াশোনা শেষ করে কানাডায় থেকে যেতে চান, তাঁদের সঠিক সময়ে পড়াশোনা শেষ করে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। অর্থাৎ পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজের পেছনে ছুটলে কানাডায় থেকে যাওয়া বেশ কঠিন হবে।