স্টেম শিক্ষা কী, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে গুরুত্ব কতটুকু
স্টেম এডুকেশন নিয়ে সম্প্রতি বেশি আলোচনা হয়। সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথেম্যাটিকস—এই চার বিষয়ের প্রথম অক্ষর মিলিয়ে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে স্টেম এডুকেশন।
উন্নত দেশগুলোর ভাবনা, ভবিষ্যতে তাদের দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে স্টেম এডুকেশন প্রয়োজনীয় বিষয়। যেসব দেশ স্টেম এডুকেশনের ওপর জোর দেবে, তারাই ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্টেম এডুকেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জটিল সমস্যা সমাধানের মনোভাব ও দক্ষতা তৈরি হয়। বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের জানাশোনা তৈরি হয় এবং শিক্ষার্থীরা আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক হয়ে উঠতে পারেন। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত এবং চীনের মতো দেশও তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় স্টেমকে গুরুত্ব দিয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। স্টেম এডুকেশনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং একুশ শতকের জন্য জনবল গড়ে তোলা।
স্টেম শিক্ষা কী?
মানুষের জীবনে সব জায়গায় আছে স্টেম শিক্ষার প্রভাব। যেমন বিজ্ঞান ছাড়া সভ্যতা অচল। জীবনের প্রতিটি জায়গায় বিজ্ঞানের প্রভাব। পাশাপাশি মানবসভ্যতায় প্রযুক্তি ক্রম বিকাশমান। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। একইভাবে প্রকৌশল ও গণিতও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই চার বিষয়কে সমন্বিতভাবে শেখার নামই হচ্ছে স্টেম শিক্ষা।
এ শিক্ষার মূল বিষয়গুলো হচ্ছে—
*সৃজনশীলতা
*কোনো কিছু খুঁজে বের করার দক্ষতা
*বিশ্লেষণ করা
*টিম-ওয়ার্ক
*যোগাযোগ
*ডিজিটাল জ্ঞান
*সমস্যার সমাধান করা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বলেন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি এবং গণিতের ধারণাগুলোকে সমন্বিতভাবে শিখতে হবে। যেকোনো সমস্যার সমাধান, সেগুলোর বিশ্লেষণ এবং এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য স্টেম শিক্ষা জরুরি। তিনি বলেন, স্টেম শিক্ষা মুখস্থ বিদ্যাকে নিরুৎসাহিত করে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, পাঠ্যবই না বুঝে মুখস্থ করার প্রবণতা তৈরি হয়। ফলে বিজ্ঞান ও গণিতের মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের মনে একধরনের ভীতি কাজ করে। পাঠ্যপুস্তকের বর্ণনাগুলো সহজবোধ্য হতে হবে। সেখানে দৈনন্দিন জীবন থেকে উদাহরণ তুলে ধরতে হবে। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এই বিষয়গুলো সব সময় অনুপস্থিত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেম শিক্ষায় যাঁরা শিক্ষিত, তাঁদের জন্য প্রতিবছর ১৭ শতাংশ হারে কাজের সুযোগ বাড়ছে। আর অন্য ডিগ্রিধারীদের জন্য কর্মসংস্থান বাড়ছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। স্টেম শিক্ষা নতুন জিনিস উদ্ভাবন করতে শেখায়। ফলে বাজারে নতুন নতুন পণ্য ও সেবা আসে এবং এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়। শেষ বিচারে দেশের অর্থনীতিতে সেটি অবদান রাখে।
স্টেম শিক্ষা শুরুর বয়স—
স্টেম শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব দেশ এরই মধ্যে অনেকটা এগিয়েছে তার মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা স্টেম এডুকেশনকে উৎসাহিত করার মতো। নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি দেশটিতে স্টেমবিষয়ক বিষয়াবলি শেখার বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও হয়ে থাকে।
লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সায়েন্স ফোরামের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এসব আয়োজনে দেশের বিজ্ঞানীরা অংশ নেন এবং তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি এবং গবেষণাগার দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে তাদের অনুসন্ধিৎসু মন তৈরি হয়। লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সায়েন্স ফোরাম মনে করে, মানুষের মনে নানা ধরনের জিজ্ঞাসা, কৌতূহল এবং অনুসন্ধান শুরু হয় ছোটকাল থেকেই। এ সময় তারা পড়াশোনা এবং নানা ধরনের খেলাধুলার সঙ্গে পরিচিত হয়। সুতরাং বয়স কম থাকতেই তাদের মনে এসব বিষয় নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে পারলে সেটি ভালো ফল দেয় বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ ক্ষেত্রে, স্কুলের শিক্ষকদের একটি বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করে লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরাম। স্টেম শিক্ষা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে কৌতূহল তৈরি করা এবং স্কুলে সে পরিবেশে পড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।