ভর্তি পরীক্ষার টাকা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ নয়?
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার টাকা শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে অনেক দিন ধরে কথা হচ্ছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অনেকেই কথা বলছেন। এমনকি মহান সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি খবরে দেখলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ভর্তি পরীক্ষার টাকা ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আগামী ভর্তি পরীক্ষায় কোনো টাকা না নেওয়ার কথা বলেছে।
অস্বচ্ছ ও অসম ভাগ–বাঁটোয়ারার বাইরে আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বরং সেই জায়গায় অঙ্গুলিনির্দেশ করলে খুশি হতাম। আমার কথা হলো, ভর্তি পরীক্ষায় যে টাকা আয় হয়, তা কি শিক্ষক বা প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিদের, নাকি এই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের? ভর্তি পরীক্ষার টাকা যেভাবে ভাগ–বাঁটোয়ারা করা হয়, মনে হয় যেন এই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। আমি জানি না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই পাবলিক অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঠিক কতটা ব্যয় করে?
ভর্তি পরীক্ষার সব টাকা হওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানোর জন্য এটি হতে পারে একটি ভালো উপায়। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষা থেকে যে আয় হয়, তার বড় অংশ ব্যবহার করা যেতে পারে ছাত্রছাত্রীদের জন্য। প্রতিটি বিভাগের ল্যাব ফ্যাসিলিটি বাড়ানোর জন্য এ টাকা ব্যয় করা যেতে পারে। বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ল্যাব ফ্যাসিলিটি খুবই অপ্রতুল। ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয় করা এই টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করা যেতে পারে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য। ইন্টারনেট বা ল্যাব ফ্যাসিলিটি কিংবা তাদের আনা–নেওয়ার জন্য নতুন নতুন বাসও কেনা যেতে পারে।
অথচ বর্তমানকালের চিত্র খুবই আলাদা। পত্রিকায় আসা সংবাদ থেকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিদের ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয় দেখলে যে কারোর মনে হতে পারে যে এই টাকা আসলে ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের। খবরের বাইরে থাকা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র আসলে এ রকমই। বিশেষ করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর ভর্তি পরীক্ষার টাকার ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা শিক্ষক হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। আমি মনে করি, এই টাকার খুব যৎসামান্য সাধারণ শিক্ষকেরা পেলেও পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এটা নিয়ে কথা শুনতে হয়।
তবে এর বাইরে ব্যতিক্রম কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। শুনেছি যে এসব বিশ্ববিদ্যালয় কল্যাণ খাতে বেশি টাকা ব্যয় করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনেছি, সেখানে ভর্তি থেকে আয় করা টাকার বেশির ভাগ ছাত্রদের কল্যাণ খাতে ব্যয় করা হয়। আমিও মনে করি, এই কল্যাণ খাতে বেশির ভাগ টাকা জমা রাখা উচিত। জরুরি প্রয়োজন, গরিব ছাত্রদের বৃত্তি, নতুন ভবন নির্মাণ, ল্যাব ফ্যাসিলিটি থেকে শুরু করে অনেক কিছুর জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে এখান থেকে টাকা ব্যয় করা যেতে পারে।
একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার, আমাদের গুচ্ছ পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ছাত্রদের ভ্রমণক্লান্তি ও অর্থনৈতিক চাপ কমানোর জন্য। এখন যা হচ্ছে, তাতে ছাত্রদের অর্থ আরও বেশি লাগে। ফলে আগের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টাকা আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। তারপরও এই টাকা যদি ছাত্রদের পেছনে ব্যয় করা যায়, তাহলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার গুণগত মান আরও বাড়বে।
*লেখক: মো. ফজলুল করিম, অধ্যাপক, বিজিই বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল