বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট অনলাইনে সত্যায়িত যেভাবে

ছবি: খালেদ সরকার

বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদন কিংবা শিক্ষাগ্রহণের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার বিভিন্ন সনদপত্রের সত্যায়নকে সহজ করতে শুরু হয়েছে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি। এখন সনদ বা একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোর সত্যায়নের জন্য আর যেতে হবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে সরকারের এই অনলাইন পরিষেবা। চলুন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি দেখে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট সত্যায়িত করার অনলাইন পদ্ধতি—

  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রের জন্য শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি বা এনআইডি) অথবা অনলাইনে তালিকাভূক্ত জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে

  • পুরো প্রক্রিয়াটি যেহেতু অনলাইনকেন্দ্রিক, সেহেতু আপলোডের জন্য কাগজগুলোর সফট কপি দরকার হবে। তাই আগে থেকেই নথিগুলো স্ক্যান করে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। স্ক্যান করা ফাইলগুলো অবশ্যই জেপিইজি, জেপিজি বা পিএনজি ফরম্যাটে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে হবে। ফাইলের সাইজ অবশ্যই ১ এমবির (মেগাবাইট) মধ্যে হতে হবে

  • ধাপে ধাপে অনলাইনে শিক্ষাগত সার্টিফিকেট সত্যায়ন প্রক্রিয়া

  • মাইগভ সাইটে নিবন্ধন

  • প্রথমেই প্রবেশ করতে হবে মাইগভ (www.mygov.bd) প্ল্যাটফর্মে। পরে সাইটটিতে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নাম ও মোবাইল নম্বর বা ই–মেইল অ্যাড্রেস দিতে হবে। তারপর একটি পাসওয়ার্ড সেট করার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে প্রাথমিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

প্রোফাইল যাচাই করণ—

অ্যাকাউন্ট খোলার পর সাইটটিতে ব্যবহারকারীর জন্য তৈরি হবে একটি স্বতন্ত্র প্রোফাইল। এটি তাৎক্ষণিকভাবে এনআইডি অথবা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিংবা জন্ম সাল দিয়ে যাচাই করে নিতে হবে। একটি এনআইডি দিয়ে শুধু একটি মাইগভ অ্যাকাউন্ট যাচাই করা যাবে।

আরও পড়ুন

সুনির্দিষ্ট আবেদন অনুসন্ধান—

মাইগভ হোমপেজে প্রদর্শিত সেবাগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ‘বিদেশগামী নাগরিকদের সার্টিফিকেট সত্যায়ন’। এখানে ক্লিক করলে নতুন পেজে বিদেশ গমনের জন্য প্রাসঙ্গিক সমস্ত নথিপত্র সত্যায়নের পৃথক পৃথক আবেদন অপশন আসবে। এগুলোর মধ্য থেকে শিক্ষার্থীরা তাঁদের উদ্দিষ্ট বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে সত্যায়নগুলো চাওয়া হয়েছে, সেগুলো খুঁজে নিতে পারবেন।

এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট নথির জন্য হোমপেজের সার্চ বক্সে তা লিখেও সার্চ করা যায়। এতে প্রদর্শিত অপশনগুলোর মধ্যে সবার ওপরে থাকবে কাঙ্ক্ষিত আবেদনটি। এই অনুসন্ধানটি এমনকি ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমেও সম্পন্ন করা যায়।

আরও পড়ুন

আবেদন পদ্ধতি—

প্রতিটি আবেদন অপশনের ভেতরে সংশ্লিষ্ট আবেদনসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য একনজরে লিপিবদ্ধ করা আছে। যেমন কী কী কাগজপত্র লাগবে, আপলোডের নিয়ম, আবেদন ফি কত, অনলাইন আবেদন ফরম কীভাবে পূরণ করতে হবে এবং প্রক্রিয়াকরণে কেমন সময় লাগবে ইত্যাদি।

নথিপত্রের ধরন অনুযায়ী স্বভাবতই এ তথ্যাদি ভিন্ন ভিন্ন হবে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণের সময় সব নথির ক্ষেত্রে এক নয়। এ ছাড়া কোনো কোনো সেবা বিনা মূল্যেই পাওয়া যাবে, আবার কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে রয়েছে নির্দিষ্ট আবেদন ফি। এই ফি পরিশোধের জন্য রয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং, কার্ড এবং মোবাইল পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম।

আবেদন ফরম পূরণের সময় লাল তারকা চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক। বাকি ঘরগুলো খালি রেখেও ফর্ম পূরণ সম্পন্ন করা যাবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্লাস (+) বাটনে ক্লিক করে একাধিক পৃষ্ঠা বা ফাইল সংযোজনের অপশন পাওয়া যাবে।

পুরো আবেদন একবারে পূরণ করে সাবমিট করতে হবে—এমন কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই। আংশিক পূরণ করে তা পরে পূরণ করার জন্য ড্রাফট করে রাখা যেতে পারে। পরে মোবাইল নম্বর বা ই–মেইল আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে ‘সেবা ব্যবস্থাপনা’ অপশন থেকে ড্রাফট আবেদন পুনরায় শুরু করা যাবে।

আরও পড়ুন

প্রাসঙ্গিক কাগজগুলো আপলোড

  • সেবা গ্রহীতা তার সুনির্দিষ্ট নথির সত্যায়নের জন্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র নিজ অ্যাকাউন্টে আপলোড করে রাখতে পারবেন। সংযুক্তিগুলো সম্পূর্ণরূপে আপলোড না হওয়া পর্যন্ত পরের ধাপে যাওয়া যাবে না।

  • পৃথক পৃথক আবেদনের সময় নথি আপলোড না করে অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের পরপরই একে একে সমস্ত নথি আপলোড করে রাখা যেতে পারে। পরবর্তীতে আলাদা আবেদন দাখিলের সময় এগুলোর মধ্যে থেকে প্রাসঙ্গিক নথিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।

ছবি: ইউএনবি

আবেদনের আপডেট ট্র্যাকিং—

চূড়ান্তভাবে আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রতিটি আবেদনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ট্রাকিং নম্বর দেন। এই নাম্বার ব্যবহার করে পরবর্তীতে ‘সেবা ব্যবস্থাপনা’ অপশন থেকে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানা যাবে। এই অগ্রগতিটি প্রত্যেক সেবাগ্রহীতা তাঁর ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ড থেকে দেখতে পারবেন।

সত্যায়িত নথি প্রাপ্তি—

নির্দিষ্ট কার্যদিবস শেষে সফলভাবে সত্যায়িত নথিটি ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত হবে। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই সেবাগ্রহীতা তা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট সত্যায়িত করার এই অনলাইন পরিষেবা নথি সত্যায়নব্যবস্থাকে করেছে হয়রানিমুক্ত এবং দ্রুততর। মাইগভ সাইটে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য স্বতন্ত্র প্রোফাইলের কারণে আবেদনপত্রসহ যাবতীয় কাগপত্র সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কার্যদিবসের মধ্যে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য রয়েছে ট্র্যাকিংয়ের সুবিধা। যাবতীয় প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যে প্রথমেই প্রোফাইল যাচাই করে নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে একটি এনআইডি দিয়ে কেবল একটি অ্যাকাউন্ট যাচাই করা সম্ভব।

আরও পড়ুন