চুয়েটে আন্তর্জাতিক সম্মেলন, দেশি-বিদেশি গবেষকদের মিলনমেলায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রধান সড়ক সেজেছে বাহারি রঙের পতাকা ও ফেস্টুনে। চারদিকে উৎসবের আমেজ। ছেলেরা শার্ট, কোট ও মেয়েরা শাড়ি পড়ে এসে ভিড় জমিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের সামনে। তাঁদের সবার চোখেমুখে উচ্ছ্বাস! কেউ ব্যস্ত অনুষ্ঠান আয়োজনে, কেউ ব্যস্ত হাসি-আড্ডায়, আবার কারও তাড়াহুড়া প্রবন্ধ উপস্থাপনের প্রস্তুতিতে। এরপর দিনভর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার নানা অনুষঙ্গ নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প-আলোচনা। গত বৃহস্পতিবার থেকে এমন চিত্র দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।
এতে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, নেদারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ প্রায় ১০টি দেশ থেকে অংশ নিয়েছেন অন্তত চার শতাধিক শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তা। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূতাত্বিক গবেষণা, নগর সমস্যার সমাধানসহ পুরকৌশলের নানা বিষয়ের ওপর গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তাঁরা। সেগুলোর খুঁটিনাটি জানতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা তাঁদের উদ্দেশে ছুড়ে দেন হরেক রকমের প্রশ্ন। গবেষকেরাও সাবলীলভাবে উত্তর দেন সেসব প্রশ্নের।
এ আয়োজনকে ঘিরে বেশ উচ্ছ্বসিত পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফকাতুল ইসলাম বলেন, ‘সম্মেলনে দেশি-বিদেশি গবেষকদের সান্নিধ্যে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমরা সরাসরি তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি, গবেষণার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে পেরেছি এবং নানা বিষয়ে নতুন তথ্য ও উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ও তাঁদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতেও পুরকৌশল বিভাগ এ রকম সম্মেলন আয়োজনের ধারা অব্যাহত রাখবে।’
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হয় তিন দিনব্যপী এ আয়োজন। এতে ৫২টি কারিগরি সেশনে সর্বমোট ৪৪৭টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়। ৪টি আলোচনায় আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে পুরকৌশলের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন নিউজিল্যান্ডের ওপেন পলিটেকনিকের প্রকৌশলী অধ্যাপক গ্রেগরি ডি কস্টা, কিংডম অব নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি নিলজি কিলিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক শামস তানভির ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেডের অধ্যাপক স্কট স্মিথ।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের শেষে আয়োজন করা হয় নৈশভোজ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সেখানে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মেতে ওঠেন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। শেষ দিন গতকাল শনিবার আমন্ত্রিত অতিথি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় শিল্পকারখানা ও দৃষ্টিনন্দন স্থান ভ্রমণ।
আয়োজকেরা মনে করেন, এ ধরনের সম্মেলন ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির কল্যাণে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্মেলনের সম্পাদক পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. সজীব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য মূলত শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহী করা এবং উপস্থাপিত গবেষণা যাতে ভবিষ্যতে দেশ ও বিশ্বের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, এমন সুযোগ করে দেওয়া। সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত গবেষক, বিজ্ঞানী, শিক্ষক ও নীতিনির্ধারকেরা অংশ নিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ এবং জ্ঞান আদান-প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার সহযোগিতায় আমরা সফলভাবে সম্মেলন সম্পন্ন করতে পেরেছি। তাই তাঁদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা রইল।’