অনলাইনে কোথায় থামতে হবে, তা জানতে হবে

জুয়েল পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। ছোট বোন মারিয়া তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। নতুন বই নিয়ে স্কুল থেকে বাড়ির পথ ধরেছে দুই ভাই–বোন। ১ জানুয়ারি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা থেকেছবি: সাদ্দাম হোসেন

আজ ২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস। ২০১৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) এ দিবস উদ্‌যাপন করে আসছে। যেকোনো দিবসই যুগের চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করে বিশেষ প্রতিপাদ্য। এবারের আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ইউনেসকোর প্রতিপাদ্য ‘ঘৃণাবাচক বক্তব্য প্রতিরোধে শিক্ষা ও শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’।

একবিংশ শতাব্দীর এ সময়ে মানুষের জীবন ও জীবিকার অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

দৈনন্দিন জীবনের পুরোটা সময়ই কাজ করতে হয় অনলাইন ও অফলাইনে। অফলাইনের চেয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি স্বাধীন ও মুক্ত অনলাইনে। মনের ভাব বিনিময় করা যায়। কেউ চাইলেই যেকোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেন। দিতে পারে মতামত, পরামর্শ ও অভিযোগ। এবারের সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ প্রার্থীই প্রচার–প্রচারণা বেশির ভাগ করেছেন অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। তাই বলাই যায়, মানুষের জীবনজুড়ে অনলাইন মাধ্যমের প্রভাব ব্যাপক। অনলাইন-অফলাইনে মানুষের বক্তব্য যেন ঘৃণাবাচক না হয়, সে ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার ভূমিকা নিয়েই আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উদ্‌যাপিত হচ্ছে।

এবার আসি ঘৃণাবাচক বক্তব্য বলতে আসলে কী বোঝানো হয়? সত্যি বলতে, ঘৃণাবাচক বক্তব্যের কোনো সংজ্ঞা-বৈশিষ্ট্য নেই। তবে গুগল ও টুইটার এই ঘৃণাবাচক বক্তব্য নিয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

একজনের বক্তব্য যদি অন্য কোনো ব্যক্তির মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা–ই ঘৃণাবাচক বক্তব্য। সেটা হতে পারে মৌখিক বা কোনো ছবি-ভিডিও বা ইমোজির মাধ্যমে। কারও বক্তব্যের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, গুগল বা ফেসবুক দ্রুতই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অনেকের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়। পাশাপাশি কেউ যদি অভিযোগ করে, তার ব্যবস্থাও গুগল–ফেসবুক নিয়ে থাকে।

এ ঘৃণাবাচক বক্তব্য প্রতিরোধে শিক্ষা ও শিক্ষক কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন, সে সম্পর্কে পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষাক্রম-২০২১-এ বিস্তারিত বলা আছে। পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষাক্রম-২০২১-এ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের ১০টি মূল যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে বিস্তৃত করা হয়েছে।

পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম-২০২১ অনুসারে যে মূল যোগ্যতাগুলো ঘৃণাবাচক বক্তব্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, তা ১, ২, ৩, ৫, ৬ ও ১০। ক্রমিক অনুযায়ী মূল যোগ্যতাগুলো আলোকপাত করা যাক।

১.
অন্যের মতামত ও অবস্থানকে সম্মান ও অনুধাবন করে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নিজের মতামত যথাযথ মাধ্যমে সৃজনশীলভাবে প্রকাশ করতে পারা।

২.
যেকোনো ইস্যুতে সুচিন্তার মাধ্যমে সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে সবার জন্য যৌক্তিক ও সর্বোচ্চ কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে পারা।

৩.
ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যকে সম্মান করে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হয়ে নিজ দেশের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা প্রদর্শনপূর্বক বিশ্বনাগরিকের যোগ্যতা অর্জন করা।

লেখক
ছবি: সংগৃহীত

৫.
পারস্পরিক সহযোগিতা, সম্মান ও সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারা।

৬.
নতুন দৃষ্টিকোণ, ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন পথ, কৌশল ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করে শৈল্পিকভাবে তা উপস্থাপন এবং জাতীয় ও বিশ্বকল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারা।

১০.
ধর্মীয় অনুশাসন, সততা ও নৈতিক গুণাবলি অর্জন এবং শুদ্ধাচার অনুশীলনের মাধ্যমে প্রকৃতি ও মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারা।

এই মূল যোগ্যতাগুলো পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী যেন অর্জন করতে পারে, তা পাঠ্যবইগুলোর নানান পাঠের মাধ্যমে সন্নিবেশিত রয়েছে। শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাঠগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উল্লিখিত যোগ্যতাগুলো অর্জনে সহযোগিতা করা। একজন শিক্ষক সমাজ, রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার মেন্টর। তাই বর্তমান যুগের ঘৃণাবাচক বক্তব্য প্রতিরোধে শিক্ষকেরাই অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।

শিক্ষার্থীদের শেখাতে পারেন—কতটুকু বলবে। কোথায় থামতে হবে, তা জানাতে হবে। তবেই স্মার্ট ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠিত হবে।

লেখক: সাইফুল ইসলাম তালুকদার, প্রশিক্ষক, প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (পিটিআই), কুমিল্লা

আরও পড়ুন