ট্রাম্প আসছে, ক্যাম্পাসে ফিরে আসুন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেইল
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। এর আগেই বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সম্প্রতি ই–মেইল বার্তার মাধ্যমে তাদের বিষয়টি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের মধ্যে দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হঠাৎ এমন সতর্কবার্তা দিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভারের অধ্যাপক ক্লোই ইস্ট বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিদেশি সব শিক্ষার্থী এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।’
রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এ অভিযান যদি চলে, তাহলে যাঁরা বেকায়দায় পড়তে পারেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী।
অভিবাসী ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা ‘হায়ার এড ইমিগ্রেশন পোর্টাল’–এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে অনথিভুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে চার লাখের বেশি।
যদিও ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের রাখার জন্য তাঁরা বড় ধরনের আবাসনের ব্যবস্থা করবেন। অভিজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তা ও ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ‘সীমান্ত জার’ টম হোম্যান বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ভয়ংকর অপরাধী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি—এমন মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবেন। সে হিসেবে শিক্ষার্থীদের খুব একটা ভয় পাওয়ার কথা না বলা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েই গেছে।
এ ব্যাপারে বিবিসিকে অধ্যাপক ক্লোই ইস্ট বলেন, ‘অভিবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখন ভীষণ চাপে রয়েছেন। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাবেন কি না, সেটি নিয়েও এখন অনেক শিক্ষার্থী চিন্তায় রয়েছেন।’
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নেবেন। ফলে তার আগেই নিজেদের বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের শীতকালীন ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস। বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘২০১৬ সালে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতার থেকেই অফিস অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স সতর্কতা হিসেবে এই পরামর্শটি দিচ্ছে।’
উল্লেখ্য, প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যেখানে বেশ কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশ ছাড়াও উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। প্রথম দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু কঠোর নিয়ম চালু করার প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের মতো ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটিও তাদের বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ২০ জানুয়ারির আগে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে একটি ওয়েবিনার পর্যন্ত আয়োজন করতে দেখা গেছে, যেখানে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।
কঠোর অভিবাসন নীতির মাধ্যমে ট্রাম্প মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে চালু হওয়া এক কর্মসূচির ইতি টানতে চাইছেন, যে কর্মসূচিটি শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে এত দিন সুরক্ষা দিয়ে আসছিল।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পড়াশোনা ও একাডেমিক কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তাদের একজন ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের আর্লহাম কলেজে পড়ুয়া জাপানি নাগরিক অই মায়েদা। তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালের মে মাসে আমার স্নাতক পাস করার কথা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে আমাদের জন্য মার্কিন প্রশাসন একটু বেশিই বিপজ্জনক হতে চলেছে। পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে সামনে ভালো কিছু হওয়ার বিষয়ে আমি খুব একটা আশাবাদী না।’ তিনি বলেন, ‘(ট্রাম্প) বলেছেন যে তিনি শুধু অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান, কিন্তু বেশ কয়েকবার তাকে এর বাইরেও ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। কাজেই আমি মনে করি, তার এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসায় প্রভাব পড়তে পারে, যার ফলে তাদের নিজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়াও বেশ সহজ হয়ে যাবে।’
ট্রাম্পের ভিসা নীতি
অভিবাসীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নীতি নিয়ে এগোবেন বলে জানিয়েছেন, তাতে অন্য দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচনে দাঁড়ানোর শুরু থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরিতে ‘ভাগ বসাচ্ছে’।
মূলত ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে, বিশেষত প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন এবং তাঁরা ‘এইচ-১বি’ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও ‘এইচ-১বি’ ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন এবং তখন এর বেশ প্রভাবও বিভিন্ন খাতে পড়তে দেখা গিয়েছিল। এখন দ্বিতীয় মেয়াদেও একই নীতি অব্যাহত রাখতে চান ট্রাম্প। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে।
বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের নীতি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এবং অপরাধ করেনি—এমন নথিপত্রহীন অভিবাসীদের সুরক্ষায় সহায়তা করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্তের দায়িত্ব পাওয়া টম হোম্যান ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি বাইডেন প্রশাসনের এই নীতি উল্টে দেবেন। অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও বিতাড়ন অভিযান চালানোর সময় একটি নিশানাভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। তবে শহর-উপশহরজুড়ে গণহারে অভিযান চালানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।