সাত কলেজে স্নাতকে ভর্তির আবেদন আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চলমান ঢাকার বড় সাতটি কলেজে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সাত কলেজে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে (স্নাতক) চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ৬ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা চলার কথা ছিল। ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল আগামী এপ্রিলে।

এর আগে গত সোমবার এসব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি বাতিলের কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার ঘোষণা দেয়। যদিও এখন এসব কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কাদের অধীন হবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আজ বৈঠক করেছে। বৈঠকে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে সাত কলেজসংক্রান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত এসব কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিন-চার দিনের মধ্যে যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজের শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।

আরও পড়ুন

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৮ বছর আগে ২০১৭ সালে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই তাড়াহুড়া করে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও পরীক্ষা, মানসম্মত শিক্ষাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান পুরোপুরি হয়নি। এর ফলে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সোমবার কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন না রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বৈঠক করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি।

আজ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকার এই সাত কলেজের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কাজ করছেন। খুব দ্রুত ফল পাবেন।

তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে অনশন

প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, এই সাত কলেজের মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করাসহ সাত দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন কলেজটির পাঁচ শিক্ষার্থী। আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কলেজের মূল ফটকের সামনে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ ব্যানারে তাঁরা এ কর্মসূচি শুরু করেন।

কলেজের মূল ফটকের সামনে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে’ পাঁচজন শিক্ষার্থী অনশনে বসেছেন
ছবি: শিক্ষার্থীদের সৌজন্যে

অনশনরত গণিত বিভাগের ছাত্র আমিনুল ইসলাম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা আমরণ অনশন করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাত দফা দাবি মেনে নেওয়া না হবে, ততক্ষণ আমরা অনশন পালন করব। শিক্ষার্থীদের কিছু হলে এর দায়ভার সরকার নেবে। আমরা সাত কলেজের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলাম না, আমরা তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য আন্দোলন করেছি।’

আরও পড়ুন