ভারতে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের’ অভিযোগে নেট পরীক্ষা বাতিল, পরীক্ষাপদ্ধতি কেমন, কারা দেন
ইউজিসি আয়োজিত নেট (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট)-এর পরীক্ষা হয় গত মঙ্গলবার। কিন্তু গতকাল বুধবার এ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষায় ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’–সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে এ বছর জুনের নেট পরীক্ষা বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদ সংস্থা পিটিআই। বাতিল হওয়া নেট পরীক্ষা আবার নেওয়া হবে। নেট পরীক্ষা ভারতে ‘গবেষণার প্রবেশদ্বার’ পরীক্ষা নামে পরিচিত। নেট-এর প্রশ্নপত্র ফাঁস ও দুর্নীতি মামলা নিয়ে যখন ভারতজুড়ে আলোচনা, তখনই বাতিল হয়ে গেল ইউজিসির নেট পরীক্ষা।
ইউজিসির নেট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অভিযোগে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, ওই অনিয়ম তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনটিএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাইবার ক্রাইম শাখায় আসা একাধিক কারচুপির অভিযোগের ভিত্তিতেই নেট পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে নেট পরীক্ষা বাতিল হওয়ার পর এবার ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা (নিট-ইউজি) বাতিলের দাবি তুলছে বিরোধী দলগুলো। তাদের ভাষ্য, অনিয়মের আশঙ্কায় যদি ইউজিসির নেট পরীক্ষা বাতিল করা হয়, তবে নিট পরীক্ষা কেন নয়? এই পরীক্ষায় তো আরও বেশি অনিয়মের অভিযোগ আছে।
পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণার পরে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে কটাক্ষ করে বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী মোদি) “পরীক্ষা পে চর্চা” অনেক করেন, কবে “নিট পে চর্চা” করবেন? ইউজিসির নেট পরীক্ষা বাতিল লক্ষাধিক ছাত্রীর জয়, এটা মোদি সরকারের ঔদ্ধত্যের পরাজয়, যাঁরা যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন।’
গত মঙ্গলবার দুটি অর্ধে নেট পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ‘ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কো–অর্ডিনেশন সেন্টার’ (১৪ সি)-এর জাতীয় সাইবার ক্রাইম থ্রেট অ্যানালিটিকস ইউনিট থেকে পাওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষায় ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’–সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়টি নজরে আসে কর্তৃপক্ষের। এরপরই মন্ত্রণালয়ের কাছে পরীক্ষা বাতিলের বার্তা দেয় আয়োজক সংস্থা ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি’ (এনটিএ)।
নেট পরীক্ষা কী, কারা দেন
প্রতিবছর জুন ও ডিসেম্বর মাসে ইউজিসির নেট পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে থাকে জাতীয় পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা (এনটিএ)। এটি ‘জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ’ প্রদান এবং দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর’ নিয়োগের জন্য যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা। এ বছর জুন পর্বের ইউজিসি নেট হওয়ার কথা ছিল ১৬ জুন। পরে পরীক্ষার দিন পিছিয়ে ১৮ জুন করা হয়। দেশের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে ওই দিন দুই ধাপে ‘ওএমআর’ শিটের মাধ্যমে পরীক্ষা হয়।
পরীক্ষার্থীরা মোট ৮৩টি বিষয়ে পেন অ্যান্ড পেপার পদ্ধতিতে নিট পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় নেওয়া হয় পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ অর্জন করতে পারেন। এ ছাড়া তাঁরা ‘সহকারী অধ্যাপক’ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পছন্দের বিষয় নিয়ে পিএইচডিও করতে পারেন।
দর্শন, ইতিহাস, বাণিজ্য, সোশ্যাল ওয়ার্ক, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, মিউজ়িক, আইন, তুলনামুলক সাহিত্য, ক্রিমিনোলজি, ভিজ্যুয়াল আর্ট, ট্যুরিজ়ম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হিন্দিসহ কয়েকটি ভাষার পরীক্ষা হয় ১৮ জুন। প্রথম ধাপে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে এ পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। দ্বিতীয় ধাপে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, শিক্ষা, হোম সায়েন্স, লেবার ওয়েলফেয়ার, লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স, সাংবাদিকতা, ইংরেজি, বাংলাসহ আরও কিছু ভাষার পরীক্ষা নেওয়া হয়।
পরীক্ষায় দুটি প্রশ্নপত্র থাকে, যাতে অবজেকটিভ ধরনের প্রশ্ন থাকে। প্রথম পত্রে ৫০টি প্রশ্ন, দ্বিতীয় পত্রে ১০০টি প্রশ্ন এবং প্রতিটি প্রশ্নে ২ নম্বর থাকে। উভয় কাগজপত্র সম্পূর্ণ করার জন্য প্রার্থীদের তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। পেপার ১ সব প্রার্থীর জন্য সাধারণ ও বাধ্যতামূলক। ইউজিসির নেট পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং নেই।