এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের আদেশ জারি, ফলাফল কীভাবে সে বিষয়ে আজ বৈঠক
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করেছে সরকার। পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে হবে।
এইচএসসি ও সমমানের বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল ঘোষণা করে আদেশ জারি করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। তবে, ফল তৈরি ও তা কীভাবে প্রকাশ করা হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু জানায়নি শিক্ষা বোর্ড।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সই করা এ আদেশ জারি করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার (২০ আগস্ট)। এতে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৪-এর স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হলো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
মঙ্গলবার সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ফলাফলের বিষয়ে আজ বুধবার বেলা ১১টায় সব কটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠক থেকে সুপারিশ তৈরি করে তা সরকারের কাছে পাঠানো হবে। সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখের মতো। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখনো পর্যন্ত ছয়টি পরীক্ষা বাকি ছিল। ব্যবহারিক পরীক্ষাও হয়নি।
এরই মধ্যে ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যদিও সেটা হয়নি। কারণ হিসেবে শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির দিন বিভিন্ন এলাকায় থানায় হামলা হয়েছিল। এতে থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ১১ আগস্টের পরিবর্তে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
কিন্তু আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের দাবি ছিল, অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে হবে। তাঁরা বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাঁদের মানসিক চাপে ফেলেছে। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নন। অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি। এ অবস্থায় তাঁরা স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর দিতে চান না। ইতিমধ্যে হওয়া পরীক্ষা এবং স্থগিত বিষয়ে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করার দাবি জানান তাঁরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হওয়ায় সবাই পাস করেন। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
এবারের স্থগিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো না হওয়ার বিষয়ে দুই ধরনের মত পাওয়া গেছে শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার মাঝখানে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই এ বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। এখন ভিন্ন ব্যবস্থায় ফলাফল প্রকাশের সময় দেখতে হবে কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তবে স্থগিত পরীক্ষা বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো নজির হবে না বলে মনে করেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এতে শিক্ষার্থীদেরই ভুগতে হবে। তাই কষ্ট হলেও পরীক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। সরকারেরও পরীক্ষাটি নেওয়া দরকার ছিল।