গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বহালের দাবিতে আচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

ফাইল ছবি প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার এই স্মারকলিপি দেন তাঁরা।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তবে গুচ্ছভুক্ত সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গত শনিবার রাতে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা ভার্চ্যুয়াল সভা করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ্রহের কথা বলেছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে উপাচার্যরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি ও খরচ কমাতে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতেন। কিন্তু এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন ধরেই এই গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন। এবার তাঁরা আচার্যের কাছেও স্মারকলিপি দিয়ে এই দাবি জানিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, চার বছর ধরে সাধারণ ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছে ছিল) এবং পাঁচ বছর ধরে কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের ভরসার জায়গা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ গুচ্ছের প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে গেলে অনেক দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এ ছাড়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গিয়ে সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

এর আগে এ নিয়ে শনিবার উপাচার্যরা সভা করেছেন। শনিবারের সভায় অংশগ্রহণকারী একটি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনায় জানানো হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছপদ্ধতি থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাদাভাবে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, তারাও আলাদাভাবে ভর্তি কার্যক্রম চালাতে চায়। তবে এর মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় একসঙ্গে থাকার বিষয়ে শক্তভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা একসঙ্গে থাকবে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসঙ্গে থাকার কথা বলেছে। কারণ, এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি পরীক্ষা দিতে হয়, তাহলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য তা কষ্টকর, ব্যয়ও অনেক বেড়ে যাবে। তাই বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে, জাতীয় স্বার্থে গুচ্ছপদ্ধতি থাকাটা দরকার।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ারুল আজীম আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি এসেছিল, সেই চিঠির আলোকেই আলোচনা করা হয়েছে। এখন তাঁরা চাইছেন মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সভা করতে। কারণ, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এলে সুবিধা হয়। তাঁরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চান।

শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে আবারও পুরোনো ভোগান্তি ফিরে আসবে। কারণ, শিক্ষার্থীদের আবারও ছুটতে হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়বে। তাই এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন