বছরের প্রথম দিনে ‘বই বিতরণ উৎসব’
করোনাকাল ছাড়া ২০১০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দিচ্ছে সরকার। সে অনুযায়ী আজ সোমবারও বছরের প্রথম দিনে দেশের বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই বিতরণ উৎসব শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকেল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘বই বিতরণ উৎসব’ হয়। এতে শত শত শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে উৎসবে ভিন্নমাত্রা রূপ দেয়। এ উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
অনুষ্ঠানে রাজধানীর ২১টি বিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। উৎসবে এসে এবং নতুন বই নিয়ে ছিল শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। এমন শিক্ষার্থীদের একজন মারিয়াম নূর। সে ন্যাশনাল (বিকেল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তৃতীয় শ্রেণি শেষ করে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠছে। সে প্রথম আলোকে বলল, এই উৎসবে এসে তার ভালো লাগছে। উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
এতে ছোট শিশুরা গান, নৃত্য পরিবেশন করে বই বিতরণ উৎসবের ভিন্নতা দেয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসব হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) অনুমোদন না দেওয়ায় এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসব করে বই বিতরণ করা হচ্ছে না। সরকারের রুটিন কাজ হিসেবে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী। মূলত এ জন্যই তাঁদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসব করা হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তিনি নির্বাচনও করছেন না। এ জন্য তাঁর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রমতে, এবার সারা দেশে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজারের মতো নতুন বই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরের বই ২১ কোটি ৩২ লাখের বেশি। প্রাথমিকের সব বই ছাপা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিকের সব বই ছাপা শেষ হয়নি।
অষ্টম ও নবম শ্রেণির মোট ১০ কোটির কিছু বেশি বইয়ের মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি বই গতকাল রোববার বছরের শেষ দিনেও ছাপা শেষ হয়নি। ফলে বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থী সব বই (পুরো সেট) হাতে পাচ্ছে না। তারা বছরের প্রথম দিনে কয়েকটি করে নতুন বই পাচ্ছে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণির একাধিক বিষয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি লেগে যায়। এ জন্য আড়াই কোটির মতো বই ছাপতে একটু সময় লাগছে। তবে এই দুই শ্রেণির অধিকাংশ বই ছাপিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ বই ছাপিয়ে পাঠানো হয়েছে। ফলে বছরের প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থী বই পাবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও প্রথম দিনে ছয় থেকে আটটি করে বই পাবে। এই দুই শ্রেণির অবশিষ্ট বই সর্বোচ্চ ১০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে।