বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ১০ পরীক্ষা যেভাবে দেন শিক্ষার্থীরা
কোনো শিক্ষাই ততক্ষণ স্বীকৃত হয় না, যতক্ষণ না পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা মানেই কঠিন প্রস্তুতির ব্যাপার।
প্রস্তুতি ভালো হলেও শিক্ষার্থীদের মনে থাকে দুশ্চিন্তা। বছরজুড়ে পড়াশোনা শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। পড়াশোনা শেষে শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্য নানা ভীতি কাজ করে। আবার পরীক্ষা কঠিন হওয়ার কারণে অনেকে আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নেন। যেমন চীনের একটি পরীক্ষাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন’ পরীক্ষা বলা হয়। এ পরীক্ষার কেতাবি নাম ‘কাওখাও’। কাওখাওয়ের মতো আরও কিছু কঠিন পরীক্ষা আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ওয়ার্ল্ড অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য বিশ্লেষণে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ১০টি পরীক্ষার তালিকা উঠে এসেছে।
১. কাওখাও পরীক্ষা
কাওখাও চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত একটানা ১২ বছর পড়াশোনা শেষে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে প্রস্তুতিমূলক নানা পরীক্ষায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। এ পরীক্ষার ফলাফল স্কোরের ওপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ মেলে। কাওখাও পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন, তা নির্ধারিত হয়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জীবন ও কর্মসংস্থান অনেকাংশে নির্ভর করে এ পরীক্ষার ফলের ওপর। এ বছর ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
২. আইআইটি জেইই পরীক্ষা
এটি ভারতের একটি পরীক্ষা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয় এ পরীক্ষা। জেইই পরীক্ষা হলো আইআইটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে স্নাতকে ভর্তির জন্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) পরিচালিত প্রতিযোগিতামূলক একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা। পরীক্ষায় যোগ্য হতে গেলে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে যোগ্য হতে হবে।
৩. ইউপিএসসি পরীক্ষা
ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা। বিশ্বের কঠিনতম পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটি ভারতের এই ইউপিএসসি। প্রতিবছর লাখো পরীক্ষার্থী এই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেন।
প্রিলিমিনারি, মেইন ও ইন্টারভিউ—এই তিনটি ধাপে এ পরীক্ষা হয়। এসব ধাপ পেরিয়ে চাকরি পাওয়া মোটেও চারটিখানি কথা নয়।
৪. মেনসা পরীক্ষা
এটি ইংল্যান্ডের একটি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় মূলত জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা পরিমাপ করা হয় আইকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে। স্কোরের ভিত্তিতে এ পরীক্ষার অংশগ্রহণকারীদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
মেনসা বিশ্বের বুদ্ধিমান মানুষদের নিয়ে গঠিত সর্ববৃহৎ সংস্থা। এর সদস্যসংখ্যা কয়েক লাখ। সংস্থার যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। বিভিন্ন পেশা, বয়স ও শিক্ষার মানুষ এ সংস্থার সদস্য। সদস্য হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হলো বুদ্ধিমত্তা।
৫. জিআরই পরীক্ষা
গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো জিআরই। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য জিআরই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ পরীক্ষার স্কোর বিবেচনা করে বৃত্তি বা গবেষণাসংক্রান্ত বিভিন্ন সুযোগ দেয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ, মেডিকেল কলেজসহ সম্মান শ্রেণি সমমানের যেকোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী জিআরই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, মানবিক থেকে শুরু করে সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় অনুষদে পড়ুয়ারাও জিআরই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। জিআরই স্কোরের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের এডুকেশন টেস্টিং সার্ভিস (ইটিএস) জিআরই পরীক্ষার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করে।
আইভি লিগ হিসেবে আলোচিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে জিআরই স্কোর গুরুত্বপূর্ণ। জিআরই পরীক্ষায় ৩২০ বা এর বেশি স্কোর পেলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে বিভিন্ন মানের স্কোর গ্রহণ করা হয়। জিআরই পরীক্ষার সময় প্রায় ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। এ পরীক্ষার ৩টি প্রধান অংশ আছে—অ্যানালাইটিক্যাল রাইটিং, ভারবাল রিজনিং ও কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং।
৬. সিএফএ পরীক্ষা
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একটি পরীক্ষা। চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) ডিগ্রি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সিএফএ ইনস্টিটিউট। সিএফএ ডিগ্রির জন্য তিনটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
শেয়ারবাজার, বন্ড মার্কেট, বিনিয়োগ, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ইস্যু, ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস, করপোরেট ফাইন্যান্স, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে পেশাদার ডিগ্রির পরীক্ষা এটি। এ ডিগ্রি নিতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের সবচেয়ে কঠিনতম ডিগ্রি হিসেবে খ্যাত সিএফএ প্রোগ্রাম। ২০২২ সালের এক হিসাবে জানা যায়, পৃথিবীতে ১ লাখ ৭৫ হাজার সিএফএ আছেন। বাংলাদেশে মাত্র ১৪৩ জন সিএফএ রয়েছেন।
৭. সিসিআইই পরীক্ষা
এটি যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘সিসকো এক্সপার্ট লেভের সার্টিফিকেট’ পরীক্ষা। মর্য়াদাপূর্ণ এই সার্টিফিকেটের পরীক্ষা অনেক কঠিন।
৮. জিএটিই (গেট) পরীক্ষা
এটি ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তির একটি পরীক্ষা। প্রাথমিকভাবে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানের স্নাতক বিষয়গুলোর পরীক্ষা।
৯. ইউএসএমএলই পরীক্ষা
এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষা। চিকিৎসকদের জন্য তিনটি ধাপে কঠিন এ পরীক্ষা হয়। চিকিৎসকদের সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে প্র্যাকটিস করতে হলে প্রথমে ইউনাইটেড স্টেটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সামিনেশন (ইউএসএমএলই) পরীক্ষায় পাস করতে হয়। তারপর এখানকার কোনো হাসপাতালের রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে তিন থেকে চার বছরের কাজের অভিজ্ঞতা নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হতে হলে ইউএসএমএলই পাস করার বিকল্প নেই।
ইউএসএমএলই: ইউএসএমএলই পরীক্ষাটা চিকিৎসকদের চিকিৎসা বিষয়ের জ্ঞান ও ব্যবহারিক দক্ষতার পরীক্ষা। এর মোট পরীক্ষা চারটা—স্টেপ-১, স্টেপ-২ সিকে, স্টেপ-২ সিএস, স্টেপ-৩। এর মধ্যে স্টেপ-২ সিকে হলো ব্যবহারিক পরীক্ষা। বাকিগুলো এমসিকিউ। স্টেপ-২ সিএস দিতে হয় আমেরিকার পাঁচটি শহরের কোনো একটায় (শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, হিউস্টন, আটলান্টা ও লস অ্যাঞ্জেলেস)। তবে স্টেপ-১ ও স্টেপ-২ সিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছে ভারতের কলকাতায়ও দেওয়া যায়। ইউএসএমএলইর পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত কঠিন। পাস নম্বর হলো ৭৫। সব মিলিয়ে ৩০০-এর মধ্যে ১৯২ পেতে হয়। কিন্তু পাস নম্বরের ধারেকাছে পেলে, মানে কম স্কোর হলে একেবারেই লাভ নেই। এতে রেসিডেন্সি মিলবে না।
আর আরও ভয়ংকর কথা হলো, কম নম্বর পেয়ে পাস করলে টোয়েফল বা জিআরইয়ের মতো রিটেইক করা যায় না। একবার পরীক্ষা পাস করলে পরের সাত বছরের মধ্যে আবার ইউএসএমএলই দেওয়া যায় না। কাজেই কম নম্বর পেয়ে পাসের চেয়ে ফেল করাই ভালো।
১০. ক্যালির্ফোনিয়া বার পরীক্ষা
আইনজীবী হওয়ার প্রাথমিক পরীক্ষা এটি। পরীক্ষাটি যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয় অ্যাটর্নি হওয়ার জন্য। তথ্যসূত্র: জি নিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়া