গুচ্ছ ভর্তিতে থাকতে ১০ দফা দাবি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির
সুযোগ পেলে সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে যেতে চান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। সমন্বিত ভর্তিতে আয়োজকদের অদক্ষতা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তির কথাও বলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা। এখন শিক্ষকেরা চাইছেন, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে যুক্ত হয়ে যদি স্বচ্ছ নীতিমালায় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়, তবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সে পরীক্ষাপদ্ধতিতে অংশ নেবে। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সেখানেই এসব কথা বলেন শিক্ষকেরা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাশরিক হাসান বলেন, ‘আমরা কোনো সুযোগ পেলেই গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যেতে চাই। আমরা আসলে কোনোভাবেই গুচ্ছে যেতে চাই না। যদি যেতেই হয়, তবে আমাদের ১০ দফা দাবি কার্যকর করতে হবে।’
শিক্ষকদের ১০ দফা দাবিগুলো হলো—সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে শুরু করা; ভর্তিপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও মাইগ্রেশনের জটিলতা নিরসনপূর্বক ছাত্র হয়রানি বন্ধ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিপূর্বে পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়া; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা পরীক্ষা; শিক্ষার্থীদের আসনসংখ্যা অনুযায়ী ভর্তি পূর্ণ করা; ভর্তির আবেদন ফি কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা; ভর্তি আবেদন ফি ব্যতীত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন, মাইগ্রেশন, ভর্তি বাতিল বা অন্য কোনো কারণে অর্থ প্রদান করবে না তা নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আবেদনের সংখ্যা অনুযায়ী অর্থ প্রদান করা; পরীক্ষা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং এর স্বচ্ছতার জন্য একটি সুস্পষ্ট আর্থিক নীতিমালা করা।
গত শুক্রবার রাতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে এক জরুরি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষকেরা গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদি কোনো কারণে গুচ্ছতে থাকতে হয়, তবে ১০টি পূরণের শর্ত দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ এসব দাবি মেনে না নিলে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে? প্রথম আলোর এমন প্রশ্নে শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, যদি দাবি না মেনে নেওয়া হয়, তবে পরবর্তী সময়ে কার্যনির্বাহী সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাশরিক হাসান বলেন, পাবলিক যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ে, কেউ সময় মত ক্লাস শুরু করতে পারছে না। এজন্য অনেক শিক্ষার্থী সময় বাঁচাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঝুকছে। এতে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে গুচ্ছের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগসাজক থাকতে পারে। হয়তো যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ফাঁদে পড়েছে।
সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘১৯৭৩ অধ্যাদেশের কথা বলে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় উপেক্ষা করে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি নিচ্ছে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনিচ্ছা থাকার পরও যুক্ত থাকে। আমরা মনেপ্রাণে চাই গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যেতে।’
সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘গুচ্ছে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের অদক্ষতা রয়েছে। গতবারের অভিজ্ঞতা শুভকর নয়। আমরা চাই না প্রশাসনের সঙ্গে মুখোমুখি হতে। উচ্চপর্যায়ের চাপে বারবার গুচ্ছে থাকছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সংকট সমাধান হচ্ছে না। আমাদের স্বকীয়তা ধরে রাখতে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি নেওয়ার পক্ষে মত শিক্ষকদের। সমন্বিত প্রক্রিয়ায় জগন্নাথের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’ সভাপতি আরও বলেন, নতুন উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, গুচ্ছে থাকার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। গুচ্ছের স্বচ্ছতা নেই। এমনকি শিক্ষার্থীদেরও অনেক ভোগান্তিতে হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রথমবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের পরিবর্তে দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী বছর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধে এবং গুচ্ছের সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে একই সঙ্গে তৎকালীন উপাচার্য ইমদাদুল হকের বিশেষ অনুরোধে শিক্ষক সমিতি ১০ দফা দাবি জানিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গুচ্ছে যেতে রাজি হয়।
বলা হয়, পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়কে সম্মান জানিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার শর্তে সমিতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য কিছু শর্ত সাপেক্ষে মতামত প্রদান করে। পরিতাপের বিষয় হলো, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি না কমে, বরং তা চরম আকার ধারণ করে। বহুবার অপেক্ষমাণ তালিকা দিয়েও জবির বিভাগগুলোর আসনসংখ্যা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আগের মতো নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায়।