এসএসসিতে এত পরীক্ষার্থী কেন অনুপস্থিত থাকে, করণীয় কী
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। এই পরীক্ষা পেরিয়েই একজন শিক্ষার্থীকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যেতে হয়, যা পরবর্তী সময়ে উচ্চমাধ্যমিক হয়ে উচ্চশিক্ষার পথ দেখায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই ফরম পূরণ করার পরেও বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকছে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনেই সারা দেশে অনুপস্থিত ছিল ৩১ হাজার ৪৪৭ পরীক্ষার্থী। গত বছর তারও বেশি (প্রায় ৩৪ হাজার) পরীক্ষার্থী প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল।
প্রশ্ন উঠেছে, ফরম পূরণ করে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও কেন বিপুল পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে না? এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে সম্ভাব্য কিছু কারণ জানা গেল। একই সঙ্গে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ পাওয়া গেল।
অনুপস্থিতির একটা বড় কারণ হতে পারে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব। এখনো অনেক অভিভাবক আছেন, সন্তান কিসে পড়ে, কেমন পড়ছে, তার বিস্তারিত জানেন নাঅধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার আজ সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই দেখা যায় ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে (এবার ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ) পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর মনে হয়েছে মূলত তিনটি কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। প্রথমত, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে শিক্ষার্থীর নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ করে দেয়। এটি গ্রামাঞ্চলে বেশি হয়। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই পরে পরীক্ষা দেয় না। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী আছে ফরম পূরণের পর দেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো হয়নি। তখন পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকে। কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণেও পরীক্ষা দেয় না।
সাধারণ নিয়ম হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিল (ভোকেশনাল) এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলে পরীক্ষার্থী ছিল ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৬৯ জন। যত পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল, তার মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এসএসসিতে অনুপস্থিত ১৭ হাজার ১৯২ জন। এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১১ হাজার ৩৮৩ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২ হাজার ৮৭২ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। একক শিক্ষা বোর্ড হিসেবে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে।
শুধু প্রথম দিনেই নয়, এর আগে দেখা গেছে, পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতেও কিছু কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। সময়সূচি অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিলের (ভোকেশনাল) লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ মে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ২৫ মে।
বিপুল পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির পেছনে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং অর্থনৈতিক কারণ থাকতে বলে মনে করেন মূল্যায়ন–বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ঢাকার বাসার কাছে পরিচিত এক মাছ বিক্রেতা আছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি ওই মাছ বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে ছেলে না পরীক্ষা দেওয়ার কথা? কিন্তু ওই মাছ বিক্রেতা বললেন, হ্যাঁ, পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তখন আবার তিনি (হাফিজুর রহমান) জানতে চান, তাহলে গতকাল পরীক্ষা কেমন হলো? তখন জবাব দেন, না, ও তো যায়নি (মানে পরীক্ষা দেয়নি)।
এই উদাহরণ টেনে অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, অনুপস্থিতির একটা বড় কারণ হতে পারে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব। এখনো অনেক অভিভাবক আছেন, সন্তান কিসে পড়ে, কেমন পড়ছে, তার বিস্তারিত জানেন না। আবার অভিভাবকদের অর্থনৈতিক কারণেও অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকতে পারে। বাল্যবিবাহের কারণেও কিছু ছাত্রীর পড়াশোনায় সমস্যায় পড়ে।
এমনটি যাতে না হয়, সে ক্ষেত্রে পরামর্শ কী? জবাবে অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন কোন পরীক্ষার্থী এই ধরনের শঙ্কায় থাকে, সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ধারণায় থাকা দরকার। তখন ওই সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। যাতে কোনো পরীক্ষার্থীকে অনুপস্থিত থাকতে না হয়। পরীক্ষার আগে থেকেই নিবিড়ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারলে এই সমস্যা অনেকটাই দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।