বই উৎসব ১ জানুয়ারি
প্রথম দিন সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে না
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রায় ৩৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৪ শতাংশ বই ছাপা বাকি।
টানা ১১ বছর দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর এই উৎসবে ছেদ পড়ে। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
তবে উৎসব করে বই বিতরণ করা হলেও ২০২৩ সালের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, গতকাল পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৪ শতাংশ বই ছাপাই হয়নি। এমনকি জটিলতার কারণে বেশকিছু উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী বই পাবে কি না, সেই শঙ্কাও রয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে উৎসব করে বই দেওয়ার জন্য সব উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। তবে, ছাপার কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় প্রাথমিকের বই কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে প্রাথমিকের অবশিষ্ট বইও ১০ জানুয়ারির মধ্যে উপজেলায় চলে যাবে।
এবার প্রাথমিকের ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ২৪৫টি এবং মাধ্যমিকে ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি বই ছাপানো হচ্ছে। বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি করা, ভালো মানের মণ্ডের সংকট, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দামে কাজ নেওয়াসহ কয়েকটি কারণে এবার সময়মতো সব শিক্ষার্থীর হাতে মানসম্মত সব বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এই সংকট কাটেনি। এমনকি কাগজের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মুদ্রণকারীদের চাওয়া অনুযায়ী, ছাপার কাগজের উজ্জ্বলতায় ছাড় দিয়েছে এনসিটিবি। তারপরেও গতকাল পর্যন্ত ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে (উপজেলা) সব বই পাঠানো সম্ভব হয়নি।
এনসিটিবির সূত্রমতে, গতকাল পর্যন্ত প্রাথমিকে ৬ কোটি ২১ লাখ ৬৮ হাজার ৩১১টি বই ছাপা হয়েছে। যা প্রাথমিকের মোট বইয়ের ৬৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আবার ছাপা হলেও সব বই গতকাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে যায়নি। ছাপার পর আনুষঙ্গিক কাজ শেষে উপজেলা পর্যায়ে বই গেছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৭টি, যা শতকরা হিসেবে ৬১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
অন্যদিকে মাধ্যমিকে ১৮ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার ২৮৬টি ছাপা হয়েছে। যা মাধ্যমিকের মোট বইয়ের ৭৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে গেছে ১৭ কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৭ (৭৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ)।
বই ছাপার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বছরের বাকি দুই দিন অর্থাৎ আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার বড়জোর আরও ৫ থেকে ৭ শতাংশের মতো বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো যেতে পারে। এর মানে হলো, বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থী বই পাবে না।
এদিকে দুটি মুদ্রণকারীকারী প্রতিষ্ঠানের কারণে এবার ৬৮টি উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক উত্তম কুমার দাশ এনসিটিবির চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, দশদিশা প্রিন্টার্স নামে একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মোট ১৩ লাখ ২ হাজার ৩৮৭ কপি বই ছাপা ও সরবরাহের কাজ পেয়েছে। কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মুদ্রণ কাগজের মান যাচাই করাই হয়নি। একই দিন আরেক চিঠিতে বলা হয়, জাহানারা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ২১ উপজেলার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় ৯ লাখ ৯৪ হাজার বই ছাপার কাজ পেয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থানও একই। ফলে ছাপা শুরু হয়নি।
গতকাল পর্যন্ত এই সমস্যা পুরোপুরি কাটেনি। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, শেষ সময়ে বই দেওয়ার জন্য যে তৎপরতা থাকা দরকার, তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে ওই সব উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পাবে কি না তা নিয়ে এখনো সংশয় আছে।
মাধ্যমিকের উৎসব গাজীপুরে, প্রাথমিকের ঢাকায়
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সূত্রমতে, এবার মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তুক উৎসব হবে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বই উৎসব হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এক আদেশে উৎসবমুর পরিবেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব আয়োজন করতে সব আঞ্চলিক পরিচালক, অধ্যক্ষ ও প্রধানশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।