তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ঠিকমতো পড়তে পারে না
তৃতীয় শ্রেণির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বর্ণ (অক্ষর) ও শব্দ ঠিকঠাক চিনতে পারছে না। চতুর্থ শ্রেণির ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শব্দ চিনতে পারে না। আর পড়ার (রিডিং) ক্ষেত্রেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে গলদঘর্ম হতে দেখা যায়। তৃতীয় শ্রেণির ৭৬ শতাংশ ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঠিকমতো বাংলা পড়তে পারছে না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক এম এম জুলফিকার আলী। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন এবং বক্তব্য দেন।
এস এম জুলফিকার আলী জানান, তাঁরা গত বছর দেড় হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করেছিলেন। শিক্ষাক্রমের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নগুলো করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা যাচাই করা হয়েছিল।
জরিপে তিনটি অক্ষর (এর মধ্যে একটি জটিল অক্ষর ছিল) দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তা চিনতে পারে কি না। তাতে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী সব উত্তর দিতে পারে। তারা অক্ষর চিনতে পারে, বলতে পারে। অন্যদিকে বাকি অর্ধেক তা চিনতে পারে না।
আরেকটি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শব্দ (একটি জটিল শব্দসহ) চিনতে, পড়তে পারে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী সবাই তা পারছে। বাকি ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী পারছে না। তার মানে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বর্ণ ও শব্দ ভালোভাবে চিনতে পারছে না।
গবেষণার তথ্য বলছে, চতুর্থ শ্রেণিতে সাধারণ শব্দ চিনতে পারছে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী, অন্যরা পারছে না। কঠিন শব্দ পড়তে পারছে ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী, অন্যরা পারছে না।
একটি অনুচ্ছেদ দিয়ে পড়তে (রিডিং) বলা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের। সেখানে পরিস্থিতি আরও খারাপ। তৃতীয় শ্রেণির ২৪ শতাংশ পড়তে পারে। চতুর্থ শ্রেণিতে তা ৩০ শতাংশ। তার মানে তৃতীয় শ্রেণির ৭৬ শতাংশ ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা ঠিকমতো পড়তে পারছে না। গবেষণার তথ্য বলছে, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫৬ শতাংশ নম্বর চিনতে পারে। তার মানে ৪৪ শতাংশ পারছে না।
প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন উন্নতির কথা বলতে গিয়ে এস এম জুলফিকার আলী বলেন, প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ (বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুদের ভর্তি)। ভর্তিতে ছেলে ও মেয়ের অসমতা অধিকাংশ স্তরে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে সমতা হয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষায় কিছু অসংগতি এখনো আছে। সাক্ষরতার হারও বেড়েছে। ঝরে পড়ার হার যথেষ্ট পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা হয়েছে; জাতীয়করণ করা হচ্ছে, এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো ইতিবাচক দিক। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এস এম জুলফিকার আলী বলেন, অর্জন আছে, এটি ইতিবাচক ও খুশির দিক। কিন্তু চ্যালেঞ্জও আছে। এগুলোকে অতিক্রম করার চেষ্টা করতে হবে। এর মধ্যে এক নম্বর বিষয় হচ্ছে গুণগত মান। গুণগত মানের বিষয়টি বড় উদ্বেগের বিষয়। এটি প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত। তাই এ বিষয়ে বড় আকারে জোর দিতে হবে যদি গুণগত মানের উন্নতি করতে চাই।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জেএসসি পরীক্ষা এবং সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে আবার বাদ এবং নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রসঙ্গে টেনে এম এম জুলফিকার আলী বলেন, ঘন ঘন পরিবর্তন করার আগে একটি বিশদ পর্যালোচনা হওয়া দরকার।
বিআইডিএসের উদ্যোগে আজ প্রায় সারা দিনেই বিভিন্ন আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ভিত্তিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিআইডিএসের মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় বিকেলের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সাব্বির আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ।