বুয়েটের শিক্ষার্থীর আমেরিকায় স্নাতক গবেষণা সহকারী হওয়ার গল্প
মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়াশোনা করেছেন। এখন পড়ছেন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাজ করছেন স্নাতক গবেষণা সহকারী হিসেবে।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের কোথায় পড়াশোনা করছেন এবং কেন?
মাহমুদুল হাসান: আমি বর্তমানে পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য পড়ছি। একজন পূর্ণকালীন স্নাতক গবেষণা সহকারী হিসেবেও কাজ করছি। আমি বুয়েট থেকে একই বিষয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শেষ করেছি। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আকর্ষণীয় ও ক্রমবিকাশমান গবেষণার অনেক সুযোগ আছে, বিশেষ করে অ্যাপ্লাইড বায়োইনফরমেটিকস, মেটাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং, স্মার্ট সারফেস ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, এনার্জি এফিশিয়েন্ট টেকনোলজির মতো উপক্ষেত্রগুলোয়। এ ছাড়া গোটা বিশ্বে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সম্ভাবনা অসাধারণ। আমার কিছু সিনিয়রকে জানি, যাঁরা ইনটেল, ফাইজার, ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইব, টেসলা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ানির্ভর শিল্পে কাজ করেন।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: এডুকেশন ইউএসএ বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রথম কীভাবে জানলেন?
মাহমুদুল হাসান: আমি এডুকেশন ইউএসএ বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রথম জেনেছি বুয়েটে অধ্যয়নরত একজন সিনিয়রের কাছ থেকে, যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: এডুকেশন ইউএসএর পরামর্শগ্রহীতা হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
মাহমুদুল হাসান: একজন পরামর্শগ্রহীতা হিসেবে এডুকেশন ইউএসএ বাংলাদেশের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। কীভাবে উন্নত মানের স্টেটমেন্ট অব পারপাস (অভীষ্ট লক্ষ্যের বিবৃতি) লিখতে হয়, সে সম্পর্কে টিপসের পাশাপাশি তারা জিআরই ও টোয়েফলের মতো মাননির্ধারণী পরীক্ষার সম্পূর্ণ নির্দেশিকাও প্রদান করেছে। এডুকেশন ইউএসএ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শিখেছি। এ ছাড়া ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে দুটি প্রস্তুতিমূলক জিআরই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আমেরিকার যেকোনো স্কুলে আবেদন এবং অন্যান্য সাধারণ মাননির্ধারণী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিনা মূল্যে রিসোর্স জোগান দেয় এডুকেশন ইউএসএ সেন্টারগুলো।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: এডুকেশন ইউএসএ থেকে পাওয়া কী কী তথ্য ও রিসোর্স আপনাকে শিক্ষাজীবনের বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে?
মাহমুদুল হাসান: আমার মনে হয়, ডক্টরাল কর্মসূচির জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চাই, সেটি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য শর্ত/বিষয়াবলিই ছিল এডুকেশন ইউএসএ থেকে পাওয়া সেরা পরামর্শ। এডুকেশন ইউএসএর উপদেষ্টারা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছেন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় গবেষণার সুযোগ, আর্থিক সহায়তা (যেমন বৃত্তির সুযোগ), কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং, বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের উপস্থিতি এবং কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বিবেচনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি ছাত্র এবং তরুণ পেশাজীবীদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ ও উৎসাহমূলক বক্তব্য আছে?
মাহমুদুল হাসান: ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য আপনাকে গবেষণার বিষয় ও অধ্যয়নের ক্ষেত্র সম্পর্কে খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও উৎসাহী হতে হবে। একাডেমিক অগ্রগতিও উন্নতির পথে ভালো-খারাপ—দুধরনের অভিজ্ঞতাই প্রচুর হবে। কখনো কখনো আপনার পিএইচডি উপদেষ্টাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকতে পারে, আর তখন মনে হতে পারে, আপনি জানেন না আপনার পড়াশোনা ও গবেষণা কোন দিকে যাবে। কিন্তু একই সময়ে আপনি বেশ কয়েকটি মাইলফলক দেখবেন এবং অর্জন করবেন, যা এই যাত্রাকে স্বস্তির ও ফলপ্রসূ করে তুলবে। সুতরাং পিএইচডির জন্য প্রচুর ধৈর্য ও অধ্যবসায় প্রয়োজন।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: একজন আন্তর্জাতিক ছাত্র হিসেবে আপনার কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে কী কী সুবিধা দিয়েছে?
মাহমুদুল হাসান: আমার একজন আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা আছেন, যাঁর সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ পেতে আলোচনা করি। পিএসইউ লাইব্রেরি ও ইন্ট্রামুরাল (আইএম) ভবনেও প্রবেশাধিকার আছে আমার, যেখানে টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল ইত্যাদি খেলতে পারি।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: আপনার অভিজ্ঞতায় উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার বিশেষ সুবিধাগুলো কী?
মাহমুদুল হাসান: আমার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার বিশেষ সুবিধা হলো এখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর তহবিল ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে, যেমন অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (ওপিটি), যা এফ-ওয়ান ভিসায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ। এ ছাড়া এখানকার লোকেরা খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং প্রত্যেকে কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলেন।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রি কীভাবে আপনার পেশাগত লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষা অর্জনে সহায়তা করেছে?
মাহমুদুল হাসান: আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের ডিগ্রি আমার পেশাগত লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষাকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ায় সহায়তা করবে। ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইব, ফাইজার, জাইমারজেনের মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে স্টাফ সায়েন্টিস্টের পদ রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ক্ষেত্রের প্রকৌশলীরা ইন্টেলের পিটিডি মডিউল ইঞ্জিনিয়ার এবং টেসলা ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সেফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। যেকোনো প্রক্রিয়ানির্ভর শিল্পে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা সত্যিই অনেক বেশি এবং তাঁদের বেতনও অনেক।
প্রশ্ন :
প্রশ্ন: ক্যাম্পাসে কোনো বাংলাদেশি অথবা দক্ষিণ এশীয় ছাত্রসংগঠন বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন?
মাহমুদুল হাসান: পেন স্টেটে, আমাদের ক্যাম্পাসে একটি প্রাণবন্ত বাংলাদেশি কমিউনিটি রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই জোট বেঁধে ক্রিকেট, ফুটবল ও টেনিস ম্যাচের মতো বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে। এ বছর আমার ক্রিকেট দল রানার্সআপ হয়েছে এবং টেনিস ডাবলসে আমরা সেমিফাইনালে গিয়েছিলাম। আমাদের একটি বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ) আছে, যা বিভিন্ন কমিউনিটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সুস্বাদু খাবার, ইনডোর গেমস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্রর মতো নানা কার্যক্রম—এসব অনুষ্ঠানে গোটা ক্যাম্পাসকে টেনে আনে।