উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষার্থীরা কেন ভর্তি হবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কী কী সুবিধা রয়েছে?
আবদুল্লাহ জামান: এ স্কুলে ভর্তি হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সন্তানকে পড়ালে সাধারণত অভিভাবকদের এক বা একাধিক টিউটর রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সন্তান ভর্তি হলে বাসায় কোনো টিউটর লাগবে না। কারণ, এখানে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করানো হয়। একটি সেকশনে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ শিক্ষার্থী এবং ক্লাসে সর্বোচ্চ ৬০ জন ভর্তি করানো হয় বলে এমনটি সম্ভব।
তারপরও যদি দেখা যায়, কোনো শিক্ষার্থী পড়াশোনা কম বুঝতে পারছে, তাহলে তার জন্য বিশেষ যত্ন ও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ১৫ দিন পরপর শ্রেণিশিক্ষকের কাছে ওই শিক্ষার্থীর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষকের রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি ওই শিক্ষার্থীর আলাদা যত্ন লাগে, তা যেকোনো বিষয়ে বা যত দিনই লাগুক, সেটা নিশ্চিত করা হয়। এমন উদ্যোগ পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের গৃহশিক্ষক ছাড়াই ভালো করার সুযোগ করে দেয়।
ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর বিষয়ে অনেক অভিভাবকের ভীতি থাকে। সেই ভীতি কাটাতে কী করেন?
আবদুল্লাহ জামান: আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনন্দসহকারে শেখাই। তাই স্কুল বন্ধ থাকলে আমাদের শিক্ষার্থীরা মন খারাপ করে। এর পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমটি হলো, শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। অন্যটি হলো, আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা। উইটন স্কুলে অধ্যয়নের প্রতিটি বিষয় পূর্বপরিকল্পিত এবং সুবিন্যাস করা থাকে। কোনো ধরনের চাপ বা শারীরিক শাস্তি দেওয়ার নিয়ম নেই। ফলে শিশুরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনাকে উপভোগ করে, কখনো ভয় করে না।
আপনাদের স্কুলের মিশন-ভিশন কী?
আবদুল্লাহ জামান: ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একটা বড় চ্যালেঞ্জ বা ভোগান্তির নাম হচ্ছে কোচিং। যাঁদের সন্তান ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, তাঁরা ভালোভাবেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। স্কুলে নিয়মিত যাওয়ার পরও ‘এক্সটা কেয়ারের’ জন্য কোচিংয়ে দিতে হয়। আমাদের মিশন হচ্ছে, ইংলিশ মিডিয়াম থেকে কোচিং বিষয়টি বিলুপ্ত করা। ইতিমধ্যে আমরা প্রমাণ করেছি, স্কুলেই মানসম্মত পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য স্কুলও আমাদের অনুসরণ করবে। ফলে একাডেমিক কোচিং ব্যবস্থা এমনিই বিলুপ্ত হবে। পাশাপাশি শুধু নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করেই শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করার জন্য প্রস্তুত করা। আর ভিশন হচ্ছে বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি করা, ভালো মানুষ তৈরি করা।
উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আগামীর স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
আবদুল্লাহ জামান: কেমব্রিজ সারা বিশ্বের ১৬৫ দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফলাফলের ভিত্তিতে এটার একটি ক্যাটাগরি হয়। আমরা কেমব্রিজ বোর্ডের অধীন বিশ্বের স্কুলগুলোর মধ্যে এক নম্বর হতে চাই।
বর্তমানে আপনারা কোন অবস্থানে আছেন?
আবদুল্লাহ জামান: স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথেই আমরা আছি, অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রথম দিকেই আছি। সম্প্রতি আমাদের প্রথম ব্যাচ পরীক্ষা দিয়েছে। আমাদের প্রতিশ্রুতি, কোচিং ছাড়া স্কুলে পড়াশোনা করেই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। আমাদের প্রথম ব্যাচের পাঁচ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। সবাই প্রায় সব বিষয়ে ‘স্টার’ পেয়েছে। দু-একটা বিষয়ে ‘এ’ দুটো মিলিয়েই পেয়েছে। আশা করছি, এ বছর আমাদের দ্বিতীয় ব্যাচ বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হবে।
উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের যাত্রা শুরু কবে?
আবদুল্লাহ জামান: ২০১৭ সাল থেকে আমরা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে লালমাটিয়ায় আমাদের দুটি ক্যাম্পাসে আছে।
অনেকেই মনে করে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ কম পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আপনারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন?
আবদুল্লাহ জামান: আগে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ একবারেই কম ছিল। বর্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার অনেক বেড়েছে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ৪০ শিক্ষার্থী বুয়েটে চান্স পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ১৩০টি আসনের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী হচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে। তাই বলতে চাই, বাংলা মিডিয়ামের মোট সংখ্যা অনুপাতে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরাও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালোই ফলাফল করছে।
আপনাদের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কী কী সাফল্য পেয়েছে?
আবদুল্লাহ জামান: গত বছরই আমরা ভারতভিত্তিক পুরস্কার ‘ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছি। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন স্কুলকে পুরস্কৃত করে থাকে। ২০২৩ সালে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ‘অলরাউন্ডার ক্যাটগরি’তে ‘বেস্ট অলরাউন্ডার স্কুল’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
কত বছর বয়স থেকে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে?
আবদুল্লাহ জামান: তিন বছর বয়স হলেই আমরা তাকে প্লে শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিই। উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ‘প্লে’ থেকে ‘এ’ লেবেল পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়।
নতুন যারা উইটন ইন্টারন্যাশনালে ভর্তি হবে, তারা কি শুধু প্লে শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে নাকি যেকোনো শ্রেণিতেই ভর্তি হতে পারে?
আবদুল্লাহ জামান: উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সাধারণত প্লে শ্রেণি থেকে ভর্তি করা হয়। তবে অন্য শ্রেণিতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষেও ভর্তির সুযোগ আছে। আমরা একটা বিষয় খুব গুরুত্ব দিয়ে মানার চেষ্টা করি, সেটা হলো, কোনোভাবেই আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করাই না।
উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে নতুন শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভর্তি হতে পারবে?
আবদুল্লাহ জামান: বছরে দুবার আমাদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়। প্রথমবার বছরের শুরুতেই, জানুয়ারি মাসে। এরপর জুন-জুলাই মাসে। উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের লালমাটিয়া ক্যাম্পাসে এসে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করা যাবে। ক্যাম্পাসের পাশাপাশি অনলাইনে আমাদের ওয়েবসাইটে ভর্তি ফরম পাওয়া যায়।
স্কুলগুলো এখন শুধু পড়াশোনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সহশিক্ষা কার্যক্রমের দিকেও নজর দেয়। এ ব্যাপারে আপনাদের কী উদ্যোগ রয়েছে?
আবদুল্লাহ জামান: একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম রাখা যায়, আমরা সব ধরনের কারিকুলাম রাখার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে সায়েন্স ফেয়ার, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, সায়েন্স অলিম্পিয়াড, স্পেলিং বি, বির্তকসহ সবকিছুই পরিচালনা করে থাকি। পাশাপাশি এখানে স্পোর্টস ক্লাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল খেলা হয়ে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি সমানতালে এখানে খেলাধুলা ও এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
আপনারা কীভাবে ধর্মীয় শিক্ষা পরিচালনা করছেন?
আবদুল্লাহ জামান: কেমব্রিজ কারিকুলামের মধ্য দিয়েই ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে শিশুদের যতটা সম্ভব মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করছে। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, দুই ঘণ্টার কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী কোরআন মুখস্থও করছেন। এ পর্যন্ত উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে প্রায় ৬০ শিক্ষার্থী কোরআনে হাফেজ হয়েছে।
উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী রয়েছে?
আবদুল্লাহ জামান: আমাদের স্কুলে ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও ১৩৫ শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষকদের বেশির ভাগই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, কেমব্রিজ এক্সামিনার ও সেলটা সার্টিফায়েড। সব শিক্ষকই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আবদুল্লাহ জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
যোগাযোগ
প্লট: ৫/৭, ব্লক: বি, লালমাটিয়া, ঢাকা-১২০৭
ফোন: +৮৮০২৫৫০০৮০৩৩, +৮৮০১৭৬৩৫৯২৪৪৯, +৮৮০১৬৩৭৫৫৯৫০৩
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: https://wheaton.edu.bd