রুয়েট ডিসি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রানার্সআপ রাজশাহী
প্রজ্ঞার অগ্নি জ্বালায় স্বপ্ন, বিতর্কের মেলা আসে বিক্ষোভের পালা নিয়ে। দিবাকর-দহনে বরেন্দ্রভূমিতে যখন রুদ্ররূপে প্রকাশিত গ্রীষ্মকাল, তখনই দেশজুড়ে আহ্বান জানানো হয় যুব মননে—জ্ঞানের দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে রুয়েট প্রাঙ্গণে যুক্তিতর্কের উষ্ণতা ছড়িয়ে ৩ ও ৪ মে রুয়েট ডিবেটিং ক্লাব (রুয়েট ডিসি) আয়োজন করে ‘বারিন্দ মেডিকেল প্রেজেন্টস রুয়েট ডিসি আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৪’। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০টি দলের শতাধিক বিতার্কিকের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এ বিতর্ক উৎসবে একত্র হন বিচারকমণ্ডলী, অতিথিরা এবং বিতর্ক অনুরাগী দর্শকেরা। এ প্রতিযোগিতায় অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রুয়েট ডিসির সঙ্গে যুক্ত ছিল প্রথম আলো।
আয়োজনের প্রথম দিন অর্থাৎ ৩ মে সকাল থেকেই আয়োজক ও বিতার্কিকদের আনাগোনায় প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে রুয়েট প্রাঙ্গণ। সকাল নয়টায় প্রতিযোগিতার ভেন্যু অর্থাৎ রুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এরপর শুরু হয় বিতর্কের মূল পর্ব। প্রতিযোগিতাটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি (বিপি) ধারায়, বাংলা ভাষায় ও ট্যাব ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়। ট্যাব রাউন্ডের সেরা ১২টি দলের মধ্যে প্রথম ৪টি দল সরাসরি জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। প্রি-সেমিফাইনাল রাউন্ডের লড়াইয়ের মাধ্যমে বাকি ৮টি দলের মধ্য থেকে ৪টি দল জায়গা করে নেয় সেমিফাইনাল রাউন্ডে। প্রি-সেমিফাইনাল রাউন্ডের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের কার্যক্রম।
পরদিন উৎসব আরও জমে ওঠে। সেমিফাইনালের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ফাইনালে জায়গা করে নেয় টুর্নামেন্টের সেরা চারটি দল। এ চার দলের মধ্যে যুক্তি, তর্ক আর বাদানুবাদের লড়াই শেষে টুর্নামেন্টের ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার গৌরব অর্জন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রানার্সআপ হয় যথাক্রমে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ফোরাম, জাহাঙ্গীরনগর ডিবেট অর্গানাইজেশন ও যশোর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডিবেটিং ক্লাব। ফাইনালে চমৎকার বিতর্কের জন্য ‘ডিবেটার অব দ্য ফাইনাল’ নির্বাচিত হন রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ফোরামের শাহরিয়ার এম ফাহিম। এ ছাড়া ট্যাব রাউন্ডজুড়ে অসাধারণ বাক্শৈলী প্রদর্শনের জন্য ‘ডিবেটার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির মিফতাহুল জান্নাত রিফাত।
দিনের শেষ ভাগে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় এ আয়োজন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. রবিউল আওয়াল। সেখানে রুয়েট ডিবেটিং ক্লাবের বার্ষিক প্রকাশনা (ম্যাগাজিন) ‘তার্কিক’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি। সমাপনী অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণী পর্বে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে তুলে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রানার্সআপ পায় যথাক্রমে ৫ হাজার, ২ হাজার ৫০০ ও ২ হাজার ৫০০ টাকা। অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারকস্বরূপ ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আরও বেশি বৃক্ষরোপণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রধান অতিথি অর্থাৎ উপাচার্যকে শুভেচ্ছা স্মারকস্বরূপ উপহার দেওয়া হয় ১০টি গাছ। প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের ভিন্নধর্মী উদ্যোগকে স্বাগত জানান প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত সবাই।
প্রতিযোগিতাটি সার্বিকভাবে সাফল্যমণ্ডিত হয়। এমন একটি প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজন করায় বিতার্কিকেরা, বিচারকেরা, অতিথিরা এবং দর্শকমণ্ডলীর ভূয়সী প্রশংসা পায় আয়োজক কমিটি।
আয়োজনের অ্যাসোসিয়েট পার্টনার ছিল প্রথম আলো।