ইন্টার্নশিপ কীভাবে করব, কী করব
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে—ইন্টার্নশিপ বা শিক্ষানবিশি শুধু শেষ বর্ষে ডিগ্রি সম্পন্ন করার একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সেমিস্টারে গিয়ে কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়, প্রতিবেদন জমা দিতে হয়, তবেই মেলে স্নাতক সনদ। অথচ ইন্টার্নশিপ কিন্তু শুধু সনদ অর্জনের পূর্বশর্ত নয়। ভিনদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্রছাত্রীরা ইন্টার্নশিপ করে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে। গুগল, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান খুব গুরুত্ব দিয়ে ইন্টার্নি নিয়োগ দেয়।
আমাদের দেশেও বহুজাতিক থেকে শুরু করে অলাভজনক সংস্থা, অনেক প্রতিষ্ঠানেই ‘ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম’ আছে। আগ্রহী হলে এসব প্রোগ্রাম থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন শিক্ষার্থীরা, সমৃদ্ধ করতে পারেন পেশাজীবন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক মনে করেন, ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থীদের সামনে করপোরেট দুনিয়ার বিশাল দরজা খুলে দেয়। এর মাধ্যমে কর্মজীবনের নানা রকম চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা পান একজন শিক্ষার্থী। যদি একাডেমিক পাঠ্যক্রমে যুক্ত না-ও থাকে, তবু নিজ আগ্রহেই ইন্টার্নশিপ করা উচিত বলে মনে করেন রিদওয়ান। তিনি বলেন, লেওনার্দো দা ভিঞ্চিও ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে নিজের শিল্পীজীবন শুরু করেছিলেন।
ইন্টার্নশিপ যেভাবে পাবেন
সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ইন্টার্নশিপ নিয়োগের তথ্য দেওয়া হয়। বিডিজবস বা ইয়ুথ অপরচুনিটিজের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়মিত ইন্টার্নশিপের খবর দেয়। এ ছাড়া ফেসবুকে এ–সংক্রান্ত নানা গ্রুপ বা পেজ আছে।
আপনি নিজেও পছন্দের প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারেন তাদের ওখানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে কি না। চোখ রাখতে পারেন প্রতিষ্ঠানের লিংকডইন ও ফেসবুক পেজে।
সাধারণত ইন্টার্নশিপের আবেদন করতে হলে জীবনবৃত্তান্ত তৈরি রাখতে হয়। কখনো কখনো লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হতে পারে। লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় নিজেকে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
ইন্টার্নশিপে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন: যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করবেন, তাদের কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপে আবেদন জমা দেওয়া আগে তাদের ওয়েবসাইট, লিংকডইন ও বার্ষিক প্রতিবেদনে চোখ বুলিয়ে নিন। প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ, কর্মীদের কাজের ধরন সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানতে চেষ্টা করুন। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইউটিউবে কোনো তথ্যচিত্র পেয়ে যেতেও পারেন। তথ্যচিত্র থেকে আপনি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
প্রয়োজন কারিগরি দক্ষতা: ইন্টার্নশিপ হিসেবে একেক প্রতিষ্ঠানে একেক ধরনের কাজ করতে হয়। তবে কাজের ধরন যা-ই হোক, কিছু সাধারণ কারিগরি দক্ষতা প্রায় ক্ষেত্রেই দরকার হয়। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেলের মতো সফটওয়্যারের খুঁটিনাটি শিখুন। এ ছাড়া ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় নিজেকে উপস্থাপন করতে পারা, ইন্টারনেটের যথার্থ ব্যবহার জানা, বাংলা ও ইংরেজিতে কম্পিউটারে টাইপ করতে পারার মতো দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
তত্ত্বাবধায়কের অধীনে কাজ করতে হবে: ইন্টার্নশিপ শুরুর পর তত্ত্বাবধায়কের অধীনে কাজ করতে হয়। কোন বিভাগে, কীভাবে, কী কাজ করতে হবে, ভালো করে বুঝে নিন। কোনো তত্ত্বাবধায়কের অধীনে কাজের সুযোগ না থাকলে কাউকে মেন্টর হিসেবে গ্রহণ করে কাজ শুরু করুন। কর্মজীবনে মেন্টর হিসেবে কারও অধীনে কাজ শেখার মাধ্যমে হাতে–কলমে কাজের সুযোগ করে নিন।
করপোরেট সংস্কৃতি শিখুন: ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের করপোরেট সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। করপোরেট আচরণ ও ভাষা বুঝতে শিখুন। কীভাবে মিটিং করতে হয়, কীভাবে দলের সঙ্গে কাজ করতে হয়, খেয়াল করুন। ই–মেইল লেখা, ই–মেইলে যোগাযোগসহ ই–মেইলসংক্রান্ত আচার-আচরণ শিখুন।
সমন্বয় করতে হবে: কাজ, পড়াশোনা ও নিজের ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সমন্বয় করা শিখতে হবে। ঠিক সময়ে অফিসে যাওয়া-আসার অভ্যাস করতে হবে। ইন্টার্নি হিসেবে সাধারণত আট ঘণ্টা অফিসে থাকতে হয় না, তারপরও অফিসের নিয়ম অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করুন। ইন্টার্নশিপ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও অন্য কোর্সের পড়াশোনা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন।