আজকের মধ্যেই আন্দোলনরত শিক্ষকদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ‘সমস্যার’ আশঙ্কা থাকায় মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আজ বুধবারের মধ্যে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ২৭ জুলাই সমস্যা হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সেখানে শিক্ষকদের যাঁরা এখানে বসিয়ে রাখছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে ভিন্ন। তাঁরা শিক্ষকদের জিম্মি করে অন্য কোনো কিছুতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই অপচেষ্টা বন্ধ করা উচিত।
ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের এই আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়া তাঁরা ঘরে ও শ্রেণিকক্ষে যাবেন না। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ১৬তম দিন গেছে আজ বুধবার।
আজ লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্যকালে আন্দোলনরত বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ অভিযোগ করেন, শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্নভাবে ‘কটাক্ষ’ করে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের (সরকারিকরণ) দাবিতে শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছেন। সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ‘প্রাণের দাবি’ সময় থাকতে না বুঝলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক হিসেবে দীপু মনি কতটুকু যোগ্য থাকবেন, সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ‘প্রাণের দাবি’ সময় থাকতে না বুঝলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক হিসেবে দীপু মনি কতটুকু যোগ্য থাকবেন, সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে।শেখ কাওছার আহমেদ, আন্দোলনরত বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
আজকের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই শিক্ষক, আপনাদের জীবনমান উন্নয়ন সরকারের অঙ্গীকার। আপনাদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাবিধান, সম্মান সমুন্নত রাখা সরকারের অঙ্গীকার। আপনারা ক্লাসে ফেরত যান, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করবেন না। যেখানে সরকার এই প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে, সেখানে এখানে থাকা মানে আপনাদের অ্যাজেন্ডা ভিন্ন।’
দীপু মনি বলেন, নির্বাচনের আগে বিরোধী দল যখন আন্দোলনের নামে নানান কিছু করছে, সেই সময়ে তাঁরা (আন্দোলনকারী শিক্ষক) এর মধ্যে আছেন। এর মধ্যে অনেক উসকানি আছে। সরকার আন্তরিকতা দিয়ে পদ্ধতিটি কী হবে, সেটির কাজ শুরু করেছে। সেই সময়ে যদি তাঁরা রাস্তায় থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে জাতীয়করণ চাওয়ার চেয়ে তাঁদের অন্য ‘অ্যাজেন্ডা’ আছে। তিনি বলেন, সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাই তাঁদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়া দরকার। তাঁরা ঢাকায় আন্দোলন করছেন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁর বিদ্যালয়ে ঠিকই ক্লাস চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্যালয় চলছে।
শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি দীর্ঘদিনের উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব সংগঠন বিভিন্ন সময়ে এটি চেয়েছে। জাতীয়করণের বিষয়টি সরল কোনো বিষয় নয়। এখানে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার আছেন, নন–ক্যাডার আছেন। পিএসসির মাধ্যমে শিক্ষক আছেন, আবার পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ ছাড়াও বেসরকারি শিক্ষক আছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আবার এমপিওভুক্ত আছেন, আবার নন–এমপিওভুক্ত আছেন। সবাইকে একই জায়গায় আনতে হলে অনেক রকমের জটিলতা আছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ও পরশু—দুই দিন আবাসিক কর্মশালা করা হচ্ছে সব শিক্ষক নেতাদের নিয়ে। তিনি আশা করছেন, যাঁরা আন্দোলন করছেন, সেই নেতারাও কর্মশালায় থাকবেন।