ক্লাস-পরীক্ষার আরও অপেক্ষা, সংক্রমণ থামলেই শুরু

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো সীমিত আকারে কাল রোববার খুললেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত দেশের স্কুল-কলেজ খুলবে না। আপাতত জুনে স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা নেই। এ কারণে আগামী মাসে স্কুলের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষাও হচ্ছে না। স্থগিত হয়ে থাকা উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষাও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শুরু হবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অফিসের কাজকর্ম সীমিত আকারে শুরু হতে চললেও ক্লাস-পরীক্ষা আপাতত বন্ধই থাকবে।

দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। এর মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো কাল রোববার থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হবে। তবে এই সময় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এমন অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশ্ন, তাহলে কি ১৫ জুনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হবে। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল জুনেও স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা নেই।

বর্তমানে দেশে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৬৬০টি, এই স্তরে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩৪ লাখের মতো। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা দেখভাল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সংস্থাটির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, এখনো স্কুল-কলেজ খোলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় জুনে অনুষ্ঠেয় অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা স্থগিত করা ছাড়া উপায় নেই।

দেশে সরকারি, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত স্কুলসহ সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী পৌনে ২ কোটি। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী প্রাথমিকে গত ১৫ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সেটি তো হয়ইনি বরং আগামীতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

>

স্কুলের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা অনিশ্চিত
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এইচএসসি পরীক্ষাও শুরু হবে না
এসএসসির ফল রোববার

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসি উল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয় না খুললে পরীক্ষা হবে কীভাবে? তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে টিভিতে ক্লাস হচ্ছে। অনেক জায়গায় শিক্ষকেরা নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে প্রশ্ন পাঠিয়ে মূল্যায়ন করছেন। তবে এটা বাধ্যতামূলক করা হবে না। কারণ, এভাবে জাতীয় মূল্যায়ন সম্ভব নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে জুনে কোনোভাবেই বিদ্যালয় খোলার সুযোগ নেই।

অবশ্য এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত এপ্রিলের শেষ নাগাদ এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে।

এইচএসসি পরীক্ষা এখনই নয়

গত ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। গত মার্চেই এই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ফলে ১৩ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পরীক্ষা আবার কবে শুরু হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এই পরীক্ষার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

এসএসসির ফল রোববার

করোনাভাইরাসের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল কাল রোববার প্রকাশ করা হবে। ওয়েবসাইটসহ প্রযুক্তির অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি আরও সহজে যাতে শিক্ষার্থীরা ফল পায়, সেই ব্যবস্থা করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এই ব্যবস্থায় যেসব পরীক্ষার্থী নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রাক্‌-নিবন্ধন করেছে, তাদের মোবাইল ফোনে ফল প্রকাশের দিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা ১টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩১ জন পরীক্ষার্থী প্রাক্‌-নিবন্ধন করেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় সাড়ে ২০ লাখ।