প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাব
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরে শিক্ষার্থী বাছাই করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি নম্বর (স্কোর) দেওয়া হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের শর্তানুযায়ী আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করবে। এর ভিত্তিতে নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকে বিবেচনা করে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
এভাবেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এখন এর ভিত্তিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব উপাচার্যকে নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভার আলোকেই পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন এই পদ্ধতিতে এখনো অনাগ্রহ থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে আগে যেভাবে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে, তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার বিষয়গুলোর জন্য তিন দিনে তিনটি পৃথক ভর্তি পরীক্ষা (অভিন্ন প্রশ্ন) হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে তিনটি শাখার জন্য পৃথক তিনটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্র থাকবে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি তাদের পরীক্ষা নেওয়ার সামর্থ্যের বেশি আবেদন জমা পড়ে, তখন মেধা অনুযায়ী (উচ্চমাধ্যমিক ফল) নিকটতম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীর একটি স্কোর বা নম্বর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির কাজ শেষ হবে।
খসড়ায় বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষার পরের কাজটি করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত পদ্ধতিতে (তারা যেভাবে উপযুক্ত মনে করে) নিজ নিজ প্রয়োজনীয় শর্ত যুক্ত করে পৃথকভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা পরিষদ (একাডেমিক কাউন্সিল) বা ভর্তি কমিটি প্রয়োজনীয় শর্তারোপ করার সুযোগ পাবে। বিশেষায়িত বিভাগগুলো যেমন, স্থাপত্য, চারুকলা ও সংগীত বিষয়ের জন্য প্রয়োজনমতো শুধু ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া যাবে। তবে সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরকে যুক্ত করেই মেধাতালিকা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি এবং আর্থিক ব্যয় কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই গুচ্ছ বা সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষার নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারই আলোকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই গত বছর সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভিত্তিতে বা সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এখন আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
তারা তাদের নিজেদের শিক্ষা পরিষদে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মত জানাবে। এর মধ্যে বুয়েটের যুক্তি হলো, তাদের আগে বলা হয়েছিল একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেকটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইউজিসি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার কথা বলছে। ফলে শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছে, গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার উদ্যোগই ভালো ছিল। আবার কেউ কেউ বলছেন কেন্দ্রীয় পরীক্ষাই ভালো হবে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে বলেছেন, নতুন এই পদ্ধতিতে কেউ আপত্তি করছে না। অনেকেই এখন ইতিবাচক। তাদের বক্তব্য হলো, তাদের কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে। তবে যে কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হবে, তাদের নিয়েই এগোবে।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। তবে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এগুলোতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রায় ৬০ হাজার আসন রয়েছে। পরীক্ষা দেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী।