শহরের সেরা শিক্ষকদের অতিথি করে গ্রামে পাঠান
গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে একদিকে শিক্ষকের সংকট চলছে, অন্য দিকে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে ভালো মানের শিক্ষক খুবই কম। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে না। এ জন্য শহরাঞ্চলে অবস্থিত সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কিছু সময়ের জন্য ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানোর প্রস্তাব এসেছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে।
আগামী রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া পাঁচ দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে মোট ৩৩৩টি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ডিসিরা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ১৮টি প্রস্তাব রয়েছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে সম্মেলনে মন্ত্রী-সচিবদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। ডিসিরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। এ জন্য এই সম্মেলন ও তাঁদের প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ‘অতিথি শিক্ষক’ করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানোর প্রস্তাবে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, এটি করা গেলে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার্থীদেরও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
এই প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবটি খুবই ভালো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূল নয়। শহরের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রামে পাঠালে ওই সময়ে শহরের বিদ্যালয়ে ক্লাসের সমস্যা হবে। তাঁর মতে, গ্রামে কম হলেও কিছু ভালো মানের শিক্ষক আছেন। তাঁদের দিয়ে আশপাশের বিদ্যালয়ে ক্লাস করানো যেতে পারে। সেখানে ‘দুর্বল’ শিক্ষকেরাও উপস্থিত থেকে শিখতে পারবেন। উন্নত দেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা আছে।
দেশের চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাদানের জন্য স্থানীয়ভাবে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। বলা হয়েছে, দুর্গম চরাঞ্চলে পদায়ন করা শিক্ষকেরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান না। এ জন্য তাঁরা দূরত্ব, দুর্গম পথ, বন্যাসহ বিভিন্ন কারণের কথা বলে থাকেন। এ জন্য এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের জন্য স্থানীয়ভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়াই চালু করা বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিসিসি) বা বিএড কলেজগুলো বন্ধের প্রস্তাব এসেছে। এর যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নামসর্বস্ব। অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, শিক্ষার মান উন্নয়নে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন, ‘শিক্ষা টিভি’ চালু করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়াল ঘেঁষে মার্কেট তৈরি নিষিদ্ধ করা, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি স্কুল বা কলেজ করার প্রস্তাব।
সম্মেলনে ২৯টি অধিবেশন
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ডিসি সম্মেলনের কর্মসূচির তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। পাঁচ দিনে মোট ২৯টি অধিবেশন হবে। এর মধ্যে ২৪টি কার্য অধিবেশন হবে। এবার প্রধান বিচারপতি, স্পিকার (স্পিকার বিদেশ থাকায় ওই সময় ডেপুটি স্পিকার দায়িত্বে থাকবেন) ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গেও আলোচনা হবে ডিসিদের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সম্মেলনে প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয়
সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন ইত্যাদি।