ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ
শিক্ষার্থীদের নকশায় একুশের পোশাক
ইতিহাস নতুনদের হাত ধরেই লেখা হয়। আবার সেসব ইতিহাস বইয়ের পাতা, ভাস্কর্য আর স্মৃতিস্তম্ভ থেকে নতুনেরাই তুলে আনছেন পোশাকেও। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চে (নিটার) ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু হয় ২০১৮ সালে। বিভাগের নামটি অপরিচিত মনে হচ্ছে কি? হতেই পারে। বাংলাদেশে বিষয়টি প্রথম চালু হয়েছে নিটারেই।
নতুন এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমের লেকচার খাতায় টুকে পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি। নিজেদের করা নকশায় তাঁরা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি করেছেন শাড়ি-পাঞ্জাবি। প্রকল্পটির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, সবাই প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের পোশাকে বা ব্যবহার্য জিনিসে ইতিহাস বা উপলক্ষ প্রতিনিয়তই উঠে আসছে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের ব্যবহারিকে শিক্ষার্থীরা হাতে–কলমে (পড়ুন হাতে-রং তুলিতে) কাজ শিখতে গিয়েও দেশের জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর একটা প্রকাশ হিসেবে ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন—বিষয়টি নিশ্চয়ই অনুপ্রেরণাদায়ক।
কথা হলো এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে। শুরুতেই তাঁর কাছে জানতে চাই, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে আসলে কী পড়ানো হয়? কেন বিভাগটি চালু হলো? ইয়াসমিন বলেন, ‘বর্তমানে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। এখন আর কারখানা, গার্মেন্টস বা ফ্যাশন হাউসগুলো শুধু ডিজাইনার বা ইঞ্জিনিয়ার খোঁজে না। তারা একই ব্যক্তির মধ্যে ডিজাইনার এবং ইঞ্জিনিয়ার চায়। যে রাঁধে তাকে চুল বাঁধাও জানতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে নামকরা হাউসগুলোতে তাই যাঁরা একই সঙ্গে ডিজাইনার ও ইঞ্জিনিয়ার, তাঁদের মূল্যায়ন বেশি। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা এই সংযোগটা ঘটাতে পারিনি। তাই সেটির জন্য দেরিতে হলেও আমাদের ইনস্টিটিউটে বিষয়টি চালু করা হয়েছে। আশা করি, এখান থেকেই ভবিষ্যতে “ডিজাইনার কাম ইঞ্জিনিয়াররা” বের হয়ে আসবে এবং বাংলাদেশি পোশাক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি তারা আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।’
ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মেঘাদীপা ভট্টাচার্য যুক্ত ছিলেন এই প্রকল্পের সঙ্গে। তাঁর কাছে শাড়ির কালো ফুলগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘এই বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের প্রথম কাজটি আমরা করতে চেয়েছি ভাষাশহীদসহ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত সব শহীদের সম্মান জানিয়ে। কালো রংটি শোক প্রকাশের জন্য আর ফুল এঁকে আমরা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। যেমনটি শহীদ মিনারে বা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে করা হয়।’
আপাতত এই পোশাকগুলো ইনস্টিটিউটেই সংরক্ষণ করা হবে। অনুপ্রেরণা দেবে এই বিভাগের অনুজদের।