প্রজাপতির মতোই চঞ্চল হয়ে ছোটাছুটি করছিল প্রি–কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া একদল শিশু। সবাই অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষার্থী। বার্ষিক ক্লাস পার্টি উপলক্ষে তারা সুর মিলিয়ে গাইছিল, ‘আমরা করব জয়’। ২০১৮ সালে তাদের স্কুল কার্যক্রম শেষ হলো ৫ ডিসেম্বর। এবার লম্বা ছুটি! দেখা হবে আবার নতুন বছরে। ঢাকা শহরের সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়াই এই স্কুলের লক্ষ্য।
ছোটবেলা থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটা কিছু করার স্বপ্ন ছিল অবিন্তা কবিরের। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন বাংলাদেশের এই তরুণী। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অবিন্তা কবির, থমকে যায় তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই ২০১৭ সালের ৪ মার্চ অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছিল তাঁর পরিবার। এর কিছুদিন পরই রাজধানীর ভাটারায় শুরু হয় অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুলের যাত্রা।
পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও অবিন্তার মন পড়ে থাকত বাংলাদেশে। কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অবিন্তার বহুমুখী পরিকল্পনার ফসল এই স্কুল। পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিশুরা এখানে শিখছে নাচ, গান, ছবি আঁকা। প্রত্যেকেই যে আলাদাভাবে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে, ক্লাস পার্টিতে তাদের পরিবেশনা দেখে তা অনুমান করা যায়। এখানে বাংলা ও ইংরেজি উভয় বিষয়ে সমান গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। মাইক্রোসফটের সহায়তায় চালু হচ্ছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, যেখানে বাচ্চারা শিখবে কোডিং ও মেশিন লার্নিং।
স্কুলের অধ্যক্ষ মালিহা আহসান বলেন, ‘যেসব পরিবারের মাসিক আয় ১২ হাজার টাকার কম, তাদের প্রাথমিকভাবে সুযোগ দেওয়া হয় এই স্কুলে। অবিন্তার রোল মডেল ছিলেন তাঁর মা। তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন কীভাবে একজন শিক্ষিত মা পরিবারের সামগ্রিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।’ জানা গেল, প্রাথমিকভাবে মেয়েশিশুদের নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে স্কুলটি নিয়ে কাজ করতে চান ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা, অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ।
দিন শেষে স্কুলের দেয়ালে অবিন্তার আঁকা ছবি, লাইব্রেরিতে অবিন্তার ছোটবেলার গল্পের বই, আর এসব কিছুর সঙ্গে একদল শিশুর হাসিখুশি মুখ দেখে মনে হলো অবিন্তা কবিরের স্বপ্নের মৃত্যু হয়নি।