বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে যা করবেন
১ অক্টোবরে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে স্থগিত হয়ে যাওয়া ২০২০ সালের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। শেষ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে করণীয় নিয়েই আজকের লেখাটি।
১. প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগের রাতে গুছিয়ে নিন
পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো পরীক্ষার আগের রাতে গুছিয়ে নেওয়া উচিত। কলম, পেনসিল, স্কেল, প্রবেশপত্রসহ আরও অন্য জিনিসপত্র একটি স্বচ্ছ ফাইলের মধ্যে রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, কোনো জিনিস যাতে বাদ না যায়।
২. পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়াশোনা নয়
পরীক্ষার আগের রাতে চিন্তামুক্ত থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি। বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বেন। মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখবেন। আপনি যা পড়েছেন, তা ঠিক পারবেন।
৩. যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাত্রা শুরু করবেন
অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের চেয়ে পরীক্ষার দিনগুলোতে রাস্তাঘাটে যানজটের পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বাইরের শিক্ষার্থীদের চাপ থাকার কারণে যানবাহন পেতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে, পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া উচিত। চেষ্টা করবেন পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে। প্রয়োজনে কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য বিকল্প ও সহজ রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন।
৪. পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে কোনো পড়াশোনা করা উচিত নয়
অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা যায়, পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের আগে তাঁরা বই নিয়ে শেষবারের মতো রিভিশন দিচ্ছেন। অনেকেই এগুলো দেখে হতাশ হয়ে যান। আসলে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের আগে চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। বিশ্বাস করুন, যা এত দিন আপনি মুখস্থ করতে পারেননি, তা পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে বই দেখলেও মুখস্থ হয়ে যাবে না। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ নিতে গেলে জানা জিনিসও ভুলে যাবেন সে সময়। আপনি যা পড়েছেন, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন। বিশ্বাস রাখবেন আপনি সফল হবেন।
৫. কেন্দ্রে নিজের আসন খুঁজবেন
শিক্ষার্থীদের আসন কোথায় এবং কত নম্বর কক্ষে, তা জানিয়ে দেয় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষাকেন্দ্রে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকবেন। প্রয়োজনে তাঁদের সহযোগিতা নিয়ে নিজেদের ভবন ও কক্ষ খুঁজে নিতে পারেন।
প্রশ্ন ও খাতা পাওয়ার পর করণীয়
১.
খাতা পাওয়ার পর সব নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিতে হবে, যাতে কোনো ভুল না হয়।
২.
প্রশ্ন কিংবা খাতায় কোনো ত্রুটি থাকলে তা জরুরি ভিত্তিতে কক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জানাতে হবে এবং ত্রুটিযুক্ত খাতা কিংবা প্রশ্ন পরিবর্তন করে নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ছেঁড়া খাতা কিংবা ঝাপসা প্রশ্ন। খুব বড় ধরনের সমস্যা না হলে প্রশ্ন বা উত্তরপত্র পরিবর্তনের কোনো দরকার নেই।
৩.
নিজের নাম, রোল, সেটসহ প্রতিটি তথ্য খুব মনোযোগ দিয়ে পূরণ করতে হবে। এখানে একটি তথ্য ভুল হয়ে গেলেই আপনার ফলাফল আসবে না। তাই এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
৪.
পরীক্ষার হলে প্রয়োজনে পানি নিয়ে যেতে পারেন। এটি আপনাকে অনেক ক্ষেত্রে চিন্তামুক্ত রাখবে।
৫.
পরীক্ষায় কোনোভাবে অসদুপায় অবলম্বন করার চেষ্টা করবেন না। এটি আপনার জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
৬.
যাঁরা বাইরের বিভিন্ন শহর থেকে আসবেন, তাঁরা ঘড়ি, মোবাইল পরীক্ষার কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে অথবা বাইরে হেল্প ডেস্কে জমা দেবেন।
৭.
প্রতিটি কক্ষে ঘড়ি থাকবে। আর যদি না থাকে, তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সময় জেনে নিতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
৮.
প্রশ্ন পাওয়ার পর তা মনোযোগসহকারে এক থেকে দুইবার পুরো প্রশ্নটা পড়া উচিত। যেই প্রশ্নের উত্তর সবচেয়ে বেশি ভালো জানা আছে, সেগুলো দিয়ে শুরু করা উচিত।
৯.
বহুনির্বাচনী পরীক্ষার ক্ষেত্রে আন্দাজে প্রশ্নের উত্তর করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ, নেগেটিভ নম্বরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না-ও মিলতে পারে। আত্মবিশ্বাস আছে, এমন প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে করে ফেলা উচিত।
১০.
পরীক্ষা শেষে কোনো উত্তর মেলানোর দরকার নেই। এতে অনেকে হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। যা উত্তর দিয়েছেন, আত্মবিশ্বাস রাখবেন। সামনে আপনার জন্য একটি নতুন দিন অপেক্ষা করছে। আপনারা আপনাদের কষ্ট, পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করবেন, এটাই প্রত্যাশা রইল।
আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা।
লেখক: শিক্ষার্থী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট।