ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি বাড়ছেই, যে ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি বাড়ছেই। গত চার শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ৬৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়। মাঝে এক বছর এই অঙ্ক অপরিবর্তিত ছিল। আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি আবার বাড়ানো হয়েছে। এবার ৫০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি ১০৫০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ শিক্ষাবর্ষের ব্যবধানে ভর্তির আবেদন ফি বাড়ল ৭০০ টাকা।
গত মঙ্গলবার ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদনের প্রক্রিয়া। ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে আবেদন চলবে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু। চারুকলা ইউনিটের মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে ৯ মার্চ।
বারবার ফি বাড়ানোর পেছনে ‘মুনাফার’ কোনো চিন্তা নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে
কোন শিক্ষাবর্ষে কত ছিল
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এই ফি ৪৫০ টাকা করা হয়। এর পরের শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে আবেদন ফি করা হয় ৬৫০ টাকা। সবশেষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফি একলাফে ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার টাকা ফি বহাল রাখা হয়। এবার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষায় আবেদন ফি আরও ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে আবেদনের অনলাইন সার্ভিস চার্জ ৪০ টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা করা হয়েছে আর মূল ফি বেড়েছে ১০ টাকা।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ১০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো লিখিত অংশ থাকায় ফি ‘সামান্য’ বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার অতিরিক্ত খরচের কথা বলা হয়। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৩৫০ টাকা বাড়ানোর কারণ হিসেবে খরচ সংকুলান না হওয়ার কথা বলা হয়।
এবারের ভর্তি পরীক্ষার মূল আবেদন ফি ৯৬৭ টাকা ৩ পয়সা। গত বার ছিল ৯৫৭ টাকার মতো। মূল ফি বেড়েছে ১০ টাকা। এর সঙ্গে অনলাইন সার্ভিস চার্জ বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। ব্যাংক বা অনলাইন পেমেন্টের সার্ভিস চার্জ হচ্ছে ১২ টাকা ৫৭ পয়সা। সব মিলে ফি ১০৫০ টাকা
বারবার ফি বাড়ানোর পেছনে ‘মুনাফার’ কোনো চিন্তা নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও তাদের নথিপত্রের বরাত দিয়ে গত বছরের জুনে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু এক শিক্ষাবর্ষের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) পরীক্ষা থেকেই ১৭ কোটি টাকা ‘লাভ’ করেছে তারা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভর্তি পরীক্ষা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে আয় দেখাতে বলে। ফলে এ হিসাব ইউজিসির চাপিয়ে দেওয়া হিসাব। বাস্তবে পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় করার সুযোগ নেই। কারণ, পরীক্ষার পেছনে খরচ অনেক।
এবার কেন বাড়ল ফি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের এবারের ভর্তি পরীক্ষার মূল আবেদন ফি ৯৬৭ টাকা ৩ পয়সা। আগের বার এটি ছিল ৯৫৭ টাকার মতো। অর্থাৎ মূল ফি বেড়েছে ১০ টাকা। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন সার্ভিস চার্জ ৩০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। ব্যাংক বা অনলাইন পেমেন্টের সার্ভিস চার্জ হচ্ছে ১২ টাকা ৫৭ পয়সা। সব মিলিয়ে ফি হয়েছে ১০৫০ টাকা।
কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের এই অধ্যাপক দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন ভর্তি কমিটিতে কাজ করছেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘১৩ বছর আগে অনলাইন আবেদন যখন শুরু হয়, তখন টেলিটক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এসেছিল। সরকারি রেট অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ হিসেবে আবেদন ফির ১০ শতাংশ তাদের দিতে হতো। প্রথমে টেলিটকের সঙ্গে গেলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব উপায়ে কাজটি করার উদ্যোগ নেয়। তবে অনলাইন চার্জ সেই ১০ শতাংশই রাখা হয়। তখন আবেদন ফি ছিল ৩০০ টাকা। এর ১০ শতাংশ (৩০ টাকা) নেওয়া হতো অনলাইন সার্ভিস ফি হিসেবে। এর সঙ্গে ব্যাংক নিত ২০ টাকা। মোট আবেদন ফি ছিল ৩৫০ টাকা। আবেদন ফি বাড়লেও দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন সার্ভিস চার্জ বাড়ানো হয়নি।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রজ্ঞাপন এসেছে যে অনলাইন সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১০ শতাংশ টাকা নেওয়া যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি ১০০০ টাকা হওয়ার পর অনলাইন ফি দাঁড়ায় প্রায় ১০০ টাকা। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপের কথা বিবেচনা করে এই ফি ৭০ টাকা করা হয়। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এই ফি অনুমোদন করে। কিন্তু যখন এই অনুমোদন হয়, তত দিনে ভর্তির কাজ শেষ হয়ে যায়। ফলে গত বছর আর এটি কার্যকর করা হয়নি। এবার থেকে এটি কার্যকর করা হচ্ছে। কাগজ থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে মূল আবেদন ফিও ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।