ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর আসনে অপেক্ষমাণ থেকে ভর্তির নির্দেশ
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট আজ বুধবার এ আদেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে আদালতে ১৪ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিট আবেদনের ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দাখিল করা সিদ্ধান্তসংবলিত একটি চিঠি (স্মারক) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে ভিকারুননিসার চারটি শাখায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মাউশিকে অবহিত করতে বলা হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মাউশির ওই সিদ্ধান্ত (স্মারক) বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে ৬ মার্চের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
এর ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে বলে আজ শুনানিতে আদালতকে জানান ভিকারুননিসা অধ্যক্ষের আইনজীবী। আদালতে অধ্যক্ষের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী শামীম সরদার ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান শুনানিতে ছিলেন। শুনানি নিয়ে আদালত ওই আদেশ দেন।
পরে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের আইনজীবী রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীর ভর্তি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্দেশনা বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে ১৪ মার্চের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষমাণ তালিকা ও প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারটি শাখায় শিক্ষার্থীদের আসনসংখ্যার তথ্যাদিও দাখিল করতে বলা হয়েছে।’
নথিপত্র থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে অভিযোগ তুলে ভর্তিসংক্রান্ত নীতিমালা এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে লটারিতে উত্তীর্ণ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি-ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি একটি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর আগে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সসীমা অনুসরণ না করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে উত্তীর্ণদের ফলাফল বাতিল বিষয়ে রিট আবেদনকারীদের একজন (পারভিন আকতার) গত ১৭ জানুয়ারি মাউশির মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। হাইকোর্ট এই আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।
রিট আবেদনকারীর মাউশিতে করা আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে উল্লেখ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানান, এ বিষয়ে মাউশির সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে নির্দেশনাসংবলিত মাউশির মহাপরিচালকের এক চিঠি (স্মারক) তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্ট মাউশির ওই সিদ্ধান্ত (স্মারক) বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন, যা আজ আদালতে দাখিল করা হয়।
ওই স্মারকের ভাষ্য, ভিকারুননিসার ভর্তির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য। চারটি শাখা মিলিয়ে ২০১৫ সালে জন্ম এমন ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্ম ১৫৯ জন এবং ২০১৮ সালে জন্ম এমন ৫ জনকে ভর্তি করা হয়। শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালার সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬+ বছর হতে হবে। ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমা নির্ধারণে জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ বেঁধে দেয়। প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির নিম্নসীমা ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি, যা মাউশি এক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য ছিল। কিন্তু ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির অযোগ্য।
স্মারকটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো হয়। স্মারকে আরও বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃক ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে আবার তা অনুসরণ না করে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো ছিল বিধিবহির্ভূত।