মেডিকেলে ভর্তিতে আবেদন শেষ কাল শুক্রবার, বাড়ছে না সময়
দেশের মেডিকেল কলেজগুলোয় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির আবেদন শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। এরপর আর সময় বাড়ানো হবে না। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনের সময় বাড়ছে না। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ছে।
আগামী ১৭ জানুয়ারি সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা। বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
দেশে মেডিকেল কলেজ ১১০টি। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি। এ ছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে। ভালো কলেজে ভর্তি হন তালিকার ওপরে থাকা শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) প্রণীত মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৫ আগেই প্রকাশ করেছে। এবার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য দুই ভাবে নম্বর কাটার কথা বলা হয়েছে। এবারও পাস নম্বর ৪০। এ ছাড়া বিএমডিসি কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার আলোকে নানা শর্তের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লিখিত ভর্তি পরীক্ষা এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটি ১ নম্বর করে মোট নম্বর ১০০।
লিখিত পরীক্ষার নম্বর বিভাজন কীভাবে—
বিষয় ভিত্তিক নম্বর বিভাজন থাকবে জীববিজ্ঞানে ৩০, রসায়নে ২৫, পদার্থবিজ্ঞানে ২০, ইংরেজিতে ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) ১০। পরীক্ষার সময় ১ (এক) ঘন্টা। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ১ (এক) নম্বর প্রদান করা হবে। কোনো প্রশ্নের একাধিক উত্তর প্রদান করলে উত্তরটি ভুল বলে গণ্য হবে। প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ (চল্লিশ) নম্বরের কম প্রাপ্তরা দেশে ভর্তি ও বিদেশে এমবিবিএস/সমতুল্য কোর্সে ভর্তির অনুমতির জন্য অকৃতকার্য হিসাবে বিবেচিত হবেন। লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মেধাক্রমসহ ফল প্রকাশ করা হবে।
আবেদনের যোগ্যতা—
*এবার পূর্ববর্তী বছরের (২০২৩ সালে) এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৩ এবং পূর্ববর্তী বছরের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে) সরকারি মেডিকেল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ/মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট এ ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট নম্বর থেকে ৬ নম্বর কেটে মেধা তালিকায় অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
*আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রার্থীকে ২০২৩ সাল অথবা ২০২৪ সালে এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০২১ সালের পূর্বে এসএসসি/‘ও’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না । প্রার্থীকে এসএসসি/‘ও’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগসহ অবশ্যই জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন থাকতে হবে।
*এসএসসি/‘ও’ লেভেল/সমমান এবং এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান দুটি পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ হতে হবে। উপজাতীয় ও পার্বত্য জেলার অ-উপজাতীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এসএসসি/‘ও’ লেভেল/সমমান এবং এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান পরীক্ষা দুটিতে মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮ হতে হবে। তবে এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ এর কম হলে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
*সব আবেদনকারী প্রার্থীর জন্য এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ৪ না থাকলে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
*এসএসসি/‘ও’ লেভেল/সমমান ও এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ১০০ নম্বর হিসেবে নির্ধারণ করে নিম্নলিখিতভাবে মূল্যায়ণ করা হবে। সেক্ষেত্রে এসএসসি/‘ও’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ এর ১০ গুন হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ এবং এইচএসসি/‘এ’ লেভেল/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ এর ১০ গুন হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ নম্বর থাকবে ।
পরীক্ষার আবেদন ফি—
*ভর্তি পরীক্ষার ফি ১০০০ টাকা। ভর্তি পরীক্ষার ফি শুধু প্রি-পেইড টেলিটকের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
আবেদনের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ—
*অনলাইনে আবেদন শুরু হয়েছে: ১০ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা থেকে
*আবেদনের শেষ: ২৭ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাত ১১টা ৫৯ মিনিট
*অনলাইনে আবেদনের ফি জমাদান শেষ: ২৮ ডিসেম্বর (শনিবার) রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত
*প্রবেশপত্র ডাউনলোড পূর্বক রঙ্গিন প্রিন্ট করার তারিখ ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ২০২৫ সাল
*ভর্তি পরীক্ষা ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সকাল ১০টা হতে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল—
*দেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি- নাতনির কোটা বাতিল করা হয়েছে। এতে শুধু মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ কোটার অধীনে আসন শূন্য থাকলে সাধারণ মেধা কোটা থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে এই কোটার আসন পূরণ করার শর্ত দেওয়া আছে। এর আগে ২০২৪ সালের ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং সন্তানের সন্তানাদির জন্য ২ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল।
*নীতিমালায় বলা হয়, সদ্য এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ’র ১০ গুণের সঙ্গে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ’র ১০ গুণ এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। তবে আগের বছরের এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় পাশ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৩ নম্বর এবং পূর্ববর্তী বছরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ/ডেন্টাল ইউনিট- এ ভর্তিকৃত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট নম্বর থেকে ৬ নম্বর কেটে মেধা তালিকায় অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।
*এমবিবিএস ভর্তির জন্য অনলাইনে ফরম পূরণের নিয়মাবলী ও ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত সব তথ্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ওয়েবসাইট, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইট হতে জানা যাবে।
*স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি দেখুন এখানে