প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে ভিকারুননিসা
প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারটি শাখায় প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক স্মারকে মাউশি নির্দেশনা দেয়।
ভর্তি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে মাউশিতে ৪ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়েছে।ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের পক্ষে হলফনামা আকারে প্রস্তুত করা কমপ্লায়েন্স (বাস্তবায়ন) প্রতিবেদনে এমন তথ্য রয়েছে।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল–জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মাউশি মহাপরিচালকের নির্দেশনাসংবলিত ওই চিঠি (স্মারক) দাখিল করা হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মাউশির ওই সিদ্ধান্ত (স্মারক) বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে ৬ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
মাউশির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। তিনি আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ–সংক্রান্ত তথ্যাদি যুক্ত করে অধ্যক্ষের পক্ষে হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স (বাস্তবায়ন) প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। ধার্য তারিখ অর্থাৎ আগামীকাল বুধবার কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করা হবে।’
নথিপত্র থেকে জানা যায়, নিদিষ্ট বয়সসীমার বাইরে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির অভিযোগ তুলে দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি রিট করেন। লটারিতে উত্তীর্ণ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি–ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর আগে জাতীয় শিক্ষানীতি–২০১০ ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী বয়সসীমা অনুসরণ না করে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে উত্তীর্ণদের ফলাফল বাতিল বিষয়ে রিট আবেদনকারীদের একজন গত ১৭ জানুয়ারি মাউশির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন। হাইকোর্ট এই আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।
আগের ধারাবাহিকতায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি আদালতে ওঠে। সেদিন মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক–২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীর সই করা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ বরাবর গত ১১ ফেব্রুয়ারি অফিস আদেশ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে সেদিন হাইকোর্ট ওই অফিস আদেশ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীকে ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখে মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক–২) হাজির হন। তিনি ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।
অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দাখিল করা সিদ্ধান্তসংবলিত একটি চিঠি (স্মারক) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। স্মারকের ভাষ্য, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ২০১৭ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য। চারটি শাখা মিলিয়ে ২০১৫ সালে জন্মতারিখ এমন ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্ম ১৫৯ জন এবং ২০১৮ সালে জন্মতারিখ এমন ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালার সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬+ বছর হতে হবে। ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমা নির্ধারণে জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ বেঁধে দেয়। প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির নিম্নসীমা ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি, যা মাউশি এক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য ছিল। কিন্তু ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির অযোগ্য।
ভিকারুননিসা অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো ওই স্মারকে আরও বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃক ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ঊর্ধ্ব সীমা নির্ধারণ করে আবার তা অনুসরণ না করে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি আগে জন্মগ্রহণকারী (প্রতিষ্ঠানের পাঠানো সংযুক্ত তালিকা) শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো ছিল বিধিবহির্ভূত। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূত (২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী) ভর্তি করা [প্রতিষ্ঠানের পাঠানো সংযুক্ত তালিকায় উল্লেখিত ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জনসহ মোট ১৬৯ জন] শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মাউশিকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হলো।