এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হলেও করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এপ্রিলের আগে মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। আর মেডিকেল ও প্রকৌশলে ভর্তি পরীক্ষার পর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে চারটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে আলোচনা করলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আগের মতো আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেবে। তবে অন্য তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর থেকেই গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এর ফলে এ বছর মোট ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবার প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে। ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় বিভাগের জন্য মোট তিনটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরাসরি পরীক্ষা ছাড়া গত শনিবার ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এবার ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দেওয়া তথ্য বলছে, উচ্চশিক্ষায় প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ১৩ লাখ ২০ হাজারের মতো। ফলে এবার ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।
২ এপ্রিল এমবিবিএসের পরীক্ষা এবং ৩০ এপ্রিল ডেন্টালের পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চেষ্টা থাকে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটে আসন আছে সাড়ে ১০ হাজারের মতো। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে জানালেন, এপ্রিল মাসে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় যে তারিখ অনুমোদন দেবে, সেই তারিখে পরীক্ষা হবে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২ এপ্রিল এমবিবিএসের পরীক্ষা এবং ৩০ এপ্রিল ডেন্টালের পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এবার প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে। ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় বিভাগের জন্য মোট তিনটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় যে শর্ত দিয়েছে, তা মেনে বুয়েট গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় যাবে না। সে ক্ষেত্রে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আগের মতো আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এখন ভর্তি কমিটি বসে কবে এই পরীক্ষা হবে সেটি ঠিক করবে।অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক
এই গুচ্ছে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিলের আগে কোনোভাবেই ভর্তি পরীক্ষা হবে না। কারণ, প্রস্তুতি নিতেই এক-দেড় মাস সময় লাগবে। এ ছাড়া রমজান মাসের বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। আরেকজন উপাচার্য বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত কমিটির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রস্তুতির বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একটি সভা হবে। সেখানেই এ বিষয়গুলো আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।
সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গত শিক্ষাবর্ষ থেকেই গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এবার ভর্তির কাজটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত মেডিকেল ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার পরে তাঁরা পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। এবারও তেমনটা হতে পারে। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আগামী সপ্তাহেই একটি সভা করার প্রস্তুতি চলছে।
সরাসরি পরীক্ষা ছাড়া গত শনিবার ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এবার ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দেওয়া তথ্য বলছে, উচ্চশিক্ষায় প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ১৩ লাখ ২০ হাজারের মতো। ফলে এবার ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।
ঢাকাসহ স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে পরীক্ষা নেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার বিকেন্দ্রীকরণ করে বিভাগীয় শহরগুলোতেও ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র করা হবে। ফলে বিভাগীয় শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং অনুরূপ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন খুলবে, তখন পরীক্ষা নিতে সক্ষম হবেন তাঁরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তির কাজটি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্নভাবে এপ্রিলের আগে পরীক্ষা নিতে পারে।
গুচ্ছে যাচ্ছে না বুয়েট, অন্য তিনটি যাচ্ছে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এ জন্য বুয়েট প্রস্তাব দেয়, প্রতিবছর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান হবে তারা এবং পরীক্ষার কেন্দ্র শুধু বুয়েটে হতে হবে। আর অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বানানের আদ্যক্ষর দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান করা এবং চার বিশ্ববিদ্যালয়েই পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করে। এ অবস্থায় ইউজিসি বুয়েটকে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে বলে।
যোগাযোগ করা হলে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় যে শর্ত দিয়েছে, তা মেনে বুয়েট গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় যাবে না। সে ক্ষেত্রে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আগের মতো আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এখন ভর্তি কমিটি বসে কবে এই পরীক্ষা হবে সেটি ঠিক করবে।
এ অবস্থায় চুয়েটের মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানালেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চুয়েট, রুয়েট ও কুয়েটকে একটি গুচ্ছ করে করে ভর্তি পরীক্ষা নেবেন। এবার চুয়েটের নেতৃত্বে হবে এই ভর্তি পরীক্ষা।