কেউ হয়তো এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়েছিলেন। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষায় পড়েছেন। তাহলে তাঁর এইচএসসির ফল কীভাবে মূল্যায়ন হলো? কারণ, বিষয় তো পরিবর্তন হয়েছে। আবার জেএসসিতে যেসব বিষয় পড়েছেন, তার সবগুলো হয়তো এসএসসি বা এইচএসসিতে ছিল না। এসব পরীক্ষার্থীর ফল কীভাবে মূল্যায়ন হলো?
এসব প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় এবার জেএসসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ফল মূল্যায়ন করা হয়েছে।
সাধারণভাবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমানের আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসিতে বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভাগ (গ্রুপ) পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষায় বিভাগের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফল উন্নয়নের জন্য এবং আংশিক বিষয়ের (এক বা একাধিক বিষয়) পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও ওপরের নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হচ্ছে।
নতুন এই নিয়মে জেএসসি এবং এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ৩৯৬ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি। এর মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীই বেশি।
ঢাকার সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বিষয় ম্যাপিংয়ের কারণে এমন হয়েছে।
অবশ্য ২০১৯ সালের এইচএসসিতে ৪৫ হাজার ৮৬৫ পরীক্ষার্থী আগের জেএসসি ও এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এইচএসসিতে তা ধরে রাখতে পারেননি।
অন্যদিকে জেএসসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পাওয়া ১৭ হাজার ৪৩ জন পরীক্ষার্থী এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর বলেন, আগের দুই পরীক্ষায় যাঁরা চতুর্থ বিষয়ের জিপিএ মিলিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এবার পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাননি।
আজ শনিবার ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নের ফল ঘোষণা করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে এবার পরীক্ষা ছাড়াই জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফলে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছেন। এর মধ্যে ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।