ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিভাগে সেমিস্টার ফির চক্করে পরীক্ষা স্থগিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক (সম্মান) ষষ্ঠ সেমিস্টার পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে আবার স্থগিত করা হয়েছে। একাধিক সেমিস্টারের বকেয়া ফি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সমন্বয়হীনতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে গত রোববার টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা বিভাগে যোগাযোগ করে ইতিবাচক সাড়া পাননি। পরে সেদিনই তাঁরা অনলাইনে চলা সব সেমিস্টারের ফি মওকুফসহ বিভিন্ন দাবিতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমান বরাবর অভিযোগ করেন। এরপরই গতকাল সোমবার তাঁদের পরীক্ষাটি স্থগিত করেন বিভাগের চেয়ারপারসন হাবিবা রহমান।
পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনাকালে সংকটাপন্ন সময়ে অনেকেই নিজের মৌলিক প্রয়োজনগুলো নিশ্চিত করতে হিমশিম খেয়েছেন, এখনো খাচ্ছেন। সেখানে সেমিস্টার ফি বকেয়া হওয়াটা স্বাভাবিক। এখন কম সময়ের মধ্যে একসঙ্গে এত ফি দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় অসম্ভব। বিভাগের প্রতিটি ব্যাচেরই কিছু শিক্ষার্থী নানা সমস্যায় বকেয়া ফি পরিশোধ করেননি। তাঁদের ব্যাচে এই সংখ্যা বেশি। কোনো কোনো শিক্ষার্থীর দু-তিন সেমিস্টারের টাকা বকেয়া রয়েছে।
বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের অনেকের সেমিস্টার ফি বকেয়া আছে। অন্তত পাঁচজনের তিন সেমিস্টার পর্যন্ত ফি বকেয়া আছে। প্রায় তিন মাস আগে বিভাগ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়। এর শেষ দিন ছিল ১০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অনেকেই অর্থ পরিশোধ করেননি। এর মধ্যে গত জানুয়ারির শেষ দিকে বিভাগ থেকে বিভিন্ন সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অনেকের সেমিস্টার ফি বকেয়া থাকায় ১০ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়। তবে পঞ্চম ব্যাচের অনেকেই তা পরিশোধ করেননি।
এই মুহূর্তে ফি পরিশোধে অপারগ শিক্ষার্থীরা রোববার বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বরাবর একটি অভিযোগ দেন। এর অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এবং বিভাগের চেয়ারপারসনকেও পাঠানো হয়। এতে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো বিভাগের আদায় করা সব ফির বিপরীতে খাতওয়ারি টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে রশিদ দেওয়া; করোনাকালে অনলাইনে চলা সব সেমিস্টারের ফি মওকুফ; বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো এবং তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক কোর্স বিবেচনায় প্রতিটি সেমিস্টারে সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিন্ন সেমিস্টার ফি প্রচলন, কেউ সেমিস্টার ফি দিতে অসমর্থ হলে তাঁর অবস্থা বিবেচনা করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার নিঃশর্ত সুযোগ দেওয়া; বিভাগের শিক্ষকদের যথাসময়ে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা ও শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু এবং বিভাগের রিসোর্সের উন্নতি ও সহজলভ্য করা।
এই অভিযোগের পরই গতকাল বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে সাময়িকভাবে স্থগিত করেন বিভাগের চেয়ারপারসন হাবিবা রহমান।
আজ মঙ্গলবার টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারপারসন ও পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভাগের চেয়ারপারসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। চেয়ারপারসন শিগগির স্থগিত পরীক্ষাটির তারিখ দেওয়ার কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যগুলো নিয়ে পরে আমি বিভাগের সঙ্গে কথা বলব।’
জানতে চাইলে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারপারসন হাবিবা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবহারিক বিভাগ হওয়ায় অন্যান্য বিভাগের চেয়ে তাঁর বিভাগে সেমিস্টার ফি কিছুটা বেশি। তবে একেক সেমিস্টারে ফি একের রকম। যেসব সেমিস্টারে ব্যবহারিক কোর্স বেশি, সেখানে টাকার অঙ্ক বেশি। স্বাভাবিক সময়ে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি সেমিস্টারে ৭-৯ হাজার টাকার মতো ফি নেওয়া হয়। এবার করোনার কারণে দুটি সেমিস্টারে ব্যবহারিকের জন্য কোনো টাকাপয়সা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ সেমিস্টারে সবার জন্য ফি ছিল ছয় হাজার টাকা। এবার স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, অন্য সেমিস্টারগুলোতে ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
হাবিবা রহমান বলেন, ‘পঞ্চম ব্যাচের পাঁচজন শিক্ষার্থীর ১৭-১৮ হাজার টাকা করে বকেয়া আছে। এ ছাড়া অনেকেরই ফি বকেয়া আছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এক সেমিস্টার পর্যন্ত বকেয়া থাকলেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। বলেছি, যে দুটি সেমিস্টারে টাকা কমানো হয়েছে, শুধু সেটা দাও। আগেরটা বেশি থাকলেও আপাতত না দিলেও হবে, পরে দিলেও হবে। তিন সেমিস্টার পর্যন্ত বাকি থাকলে বিভাগের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যে ফি দিতে পারবেন না, বিষয়টি তাঁরা আবেদন করে জানাতে পারতেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছেন না। আমাদের জানালে পরীক্ষা অবশ্যই নেব।’