এসএসসি ২০২২ - বাংলা ১ম পত্র | বই পড়া : সৃজনশীল প্রশ্ন

বই পড়া

সৃজনশীল প্রশ্ন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তোতাকাহিনী’ গল্পে রাজা শখ করে একটি তোতা পাখি কিনে সেটির শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন। শিক্ষার জন্য বিখ্যাত সব প​ণ্ডিত নিয়োগ দেওয়া হলো। মহাসমারোহে তোতার শিক্ষাদান চলতে থাকল। প​ণ্ডিতেরা পাখিটিকে জোর করে পুস্তকের পাতা মুখের মধ্যে পুরে দিতে থাকল। অবশেষে একদিন সেটি মারা গেল।

প্রশ্ন

ক. প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যিক ছদ্মনাম কী?

খ. লেখক লাইব্রেরিকে হাসপাতালের ওপরে স্থান দিয়েছেন কেন?

গ. উদ্দীপকে ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের যে বিশেষ দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটি মানুষের স্বশিক্ষিত হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়—‘বই পড়া’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।

উত্তর

ক. প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ‘বীরবল’।

খ. মানসিক সুস্থতার জন্য হাসপাতালের চেয়ে লাইব্রেরির গুরুত্ব বেশি বলে লেখক লাইব্রেরিকে হাসপাতালের ওপরে স্থান দিয়েছেন।

শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়। শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক অসুস্থতা বেশি ভয়াবহ। মানসিক সুস্থতার জন্য লাইব্রেরি অন্যতম জায়গা। যেখানে স্বেচ্ছায় বই পড়ে মানুষ তার মনের সুস্থতা পেতে পারে, মনকে আনন্দিত করতে পারে, মনের প্রসার ঘটাতে পারে। তাই লেখক লাইব্রেরিকে হাসপাতালের ওপর স্থান দিয়েছেন।

গ. উদ্দীপকে ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে উল্লিখিত ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতির কথা ফুটে উঠেছে। ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যে ফুটে উঠেছে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষা শিক্ষার্থীর জন্য ক্ষতিকর। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয় শিক্ষায় আনন্দের স্পর্শ থাকলে। আনন্দপূর্ণ শিক্ষা শিক্ষার্থীর মানসিক প্রসার ঘটে।

‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লেখক শিক্ষাপদ্ধতির নানান দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। শিক্ষাপদ্ধতির ক্রটিপূর্ণ দিকটি হলো মুখস্থনির্ভরতা এবং শুধু পরীক্ষায় পাস করে সার্টিফিকেট অর্জন করার প্রবণতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে বিদ্যা গেলানো হয়, তা শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উগড়ে দেয়। উদ্দীপকের পাখিটির ক্ষেত্রেও এমন ঘটনার দেখা পাওয়া যায়। পাখিটির ধারণক্ষমতার তোয়াক্কা না করে একদল প​ণ্ডিত জোর করে পুস্তকের পাতা পাখিটির মুখে পুরে দিতে থাকলে পাখিটির মৃত্যু হয়। উক্ত পাখিটিকে শিক্ষা দানের যে পদ্ধতি তা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে উল্লেখিত ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতির দিকটিকেই নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দিকটি মানুষের স্বশিক্ষিত হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়—মন্তব্যটির যথার্থতা রয়েছে। ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের আলোকে দেখা যায়, শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করা। আর আনন্দহীন এবং চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষায় তা কখনোই সম্ভব হয় না। তাই শিক্ষাপদ্ধতিতে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষাদানের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

‘বই পড়া’ প্রবন্ধে আমাদের স্কুল-কলেজে শিক্ষাদানের যে পদ্ধতি উল্লিখিত হয়েছে, তার সঙ্গে উদ্দীপকের ঘটনার সাদৃশ্য বিদ্যমান। এখানে জোর করে মুখস্থ করানো হয়। এই ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর মানসিক জাগরণ ঘটে না। সার্টিফিকেট অর্জনই হয়ে ওঠে তাদের একমাত্র লক্ষ্য। উদ্দীপকে তোতা পাখিটিকে শিক্ষাদানের যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা হাস্যকর। জোর করে তার মুখে পুস্তকের পাতা পুরে দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

স্বেচ্ছায় বই পড়ার মাধ্যমে এবং আনন্দপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয়। উদ্দীপকে যে শিক্ষাপদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বই পড়া’ প্রবন্ধ অনুযায়ী বলা যায়, এ পদ্ধতি মানুষের স্বশিক্ষিত হওয়ার পথে অন্তরায়।

শরীফুল ইসলাম শরীফ, সিনিয়র শিক্ষক , আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা

পূর্বের দিনের পড়া