এইচএসসি ২০২২ - ভূগোল ১ম পত্র | অধ্যায় ৫ : সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ৫

সৃজনশীল প্রশ্ন

আবহাওয়া ও জলবায়ুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের জন্যই পৃথিবীতে জীবজগতের সৃষ্টি হয়েছে। যেসব উপাদানের গড় অবস্থা বিবেচনা করে আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্ধারণ করা হয়, তাদের মধ্যে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহ অন্যতম। আবার কিছু জলবায়ুনিয়ন্ত্রণকারী নিয়ামক রয়েছে, যাদের প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে অক্ষাংশের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

প্রশ্ন

ক. বায়ুচাপ কাকে বলে?
খ. আবহাওয়া ও জলবায়ুর পার্থক্য লেখো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জলবায়ুর উপাদানগুলো ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে কোন নিয়ামকটি জলবায়ুকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে, বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠের প্রতি বর্গকিলোমিটার স্থানের ওপর যে বল প্রয়োগ করে, তাকে বায়ুচাপ বলে।

খ. আবহাওয়া হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, বায়ুর প্রবাহ, আর্দ্রতা বৃষ্টিপাত ইত্যাদি অবস্থা। অপর দিকে, জলবায়ু বলতে একটি বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে আবহাওয়ার উপাদানগুলো, যেমন বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির অন্তত ৩০-৩৫ বছরের যে গড় অবস্থা দেখা যায়, তাকে বোঝায়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, বায়ুর গতি, বায়ুর আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি জলবায়ুর উপাদান। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো—

তাপমাত্রা: তাপমাত্রার পরিমাপের ওপর কোনো স্থানের জলবায়ু বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাপমাত্রা বেশি হলে দেশটি উষ্ণতম জলবায়ু উপভোগ করে, আবার তাপমাত্রা খুব কম বা মধ্যম হলে দেশটিতে যথাক্রমে মেরুদেশীয় অথবা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর সৃষ্টি হয়।

বায়ুর চাপ: বায়ুর চাপ জলবায়ুর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। বিভিন্ন স্থানে চাপের মধ্যে পার্থক্য থাকে বলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যেও পার্থক্য হয়ে থাকে।

বায়ুর গতি: বায়ুর গতিও আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সমুদ্র হতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু কোনো অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে সে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় এবং তাপ হ্রাস পায়। কিন্তু স্থলভাগ হতে আগত বায়ুর প্রভাবে তাপ হ্রাস পায় না। এ বায়ু শুষ্ক হলে এর দ্বারা বৃষ্টিপাত হয় না।

বায়ুর আর্দ্রতা: আর্দ্রতাও আবহাওয়া ও জলবায়ুর একটি উল্লেখযোেগ্য উপাদান। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে। আর্দ্রতার প্রভাবে বৃষ্টিপাত ঘটে। বায়ু আর্দ্র হলে জলবায়ু শীতল হয় এবং বায়ুর শুষ্কতা জলবায়ুকে উষ্ণ করে তোলে।

বৃষ্টিপাত: বৃষ্টিপাত আবহাওয়া ও জলবায়ুর একটি প্রধান উপাদান। কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত বেশি হলে সেখানকার জলবায়ু আর্দ্র থাকে এবং বৃষ্টিপাত কম হলে জলবায়ু শুষ্ক হয়।

ঘ. উদ্দীপকের আলোকে অক্ষাংশ নিয়ামকটি জলবায়ুকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। অক্ষাংশ অনুযায়ী সূর্যরশ্মি কোথাও লম্বভাবে, আবার কোথাও হেলে পড়ে। নিরক্ষরেখায় সূর্যরশ্মি সারা বছর প্রায় লম্বভাবে পড়ে, সে জন্য নিরক্ষীয় অঞ্চল সর্বাপেক্ষা উষ্ণ হয়। নিরক্ষরেখা হতে যতই উত্তরে বা দক্ষিণে যাওয়া যায়, ততই সূর্যরশ্মি অধিকতর তির্যকভাবে পড়ে এবং দিন ছোট ও বড় হতে থাকে। ফলে নিরক্ষরেখা হতে উত্তর ও দক্ষিণে তাপমাত্রা ক্রমে কমতে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে গড়ে প্রতি ১০ অক্ষাংশে ১০ সেলসিয়াস উষ্ণতা হ্রাস পায়। এ কারণে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে অধিক শীত এবং এ অঞ্চল দুটি সর্বদা বরফে ঢাকা থাকে।

সুতরাং বলা যায়, এভাবেই অক্ষাংশ নিয়ামকটি জলবায়ুর ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

পূর্বের সৃজনশীল প্রশ্ন