অধ্যায় ২
নিচের উদ্দীপক পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি অঞ্চলে শিক্ষাসফরে গেল। তারা এমন একটি ভূমিরূপ দেখল; এই ভূমিরূপ সমুদ্র সমতল থেকে কয়েক শ মিটার উচ্চ, বিস্তীর্ণ ও অসমতল। পৃথিবীর মোট ভূমির শতকরা পাঁচ ভাগ এই ধরনের ভূমিরূপ।
প্রশ্ন
ক. প্লাবন সমভূমি কী?
খ. বরেন্দ্রভূমির মৃত্তিকা লালচে বর্ণের হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিরূপটি গঠনের কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিরূপটির শ্রেণিবিভাগ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
ক. বন্যায় পানিবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে নদীতীরে যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাই প্লাবন সমভূমি। যেমন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সমভূমি।
খ. প্লাইস্টোসিনকালে (আনুমানিক ২৫,০০০ বছর পূর্বে) গঠিত বরেন্দ্রভূমির মৃত্তিকা তৎকালে পলল সঞ্চয়ে গঠিত। প্লাইস্টোসিনকালে শেষ বরফ যুগের সমাপ্তিলগ্নে এখানে যে পলল সঞ্চিত হয়, তা মধুপুর কর্দম (Madhupur clay) নামে পরিচিত। জারিত (oxidized) আঠালো এবং দৃঢ় এ কর্দম লৌহ উপাদান মিশ্রিত। উপরন্তু এ অঞ্চলের মৃত্তিকা প্লাবিত হয় না। তাই বরেন্দ্রভূমির মৃত্তিকা লালচে বর্ণের।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিরূপটি মালভূমি। সমুদ্র সমতল থেকে কয়েক শ মিটার উচ্চ বিস্তীর্ণ বন্ধুর নয় কিন্তু অসমতল ভূমিই মালভূমি নামে পরিচিত।
মালভূমি সৃষ্টির নানা কারণ রয়েছে; প্রধান কয়েকটি কারণ নিচে ব্যাখ্যা করা হলো—
ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন: পাত ভূগঠন মতবাদ অনুযায়ী সমগ্র ভূত্বক কয়েকটি পাতে বিভক্ত, যা ভূনিম্নস্থ তরল শিলার ওপর ভাসমান। পাতগুলোর গতিশীলতার কারণে তার ধাক্কায় পার্শবর্তী পাতগুলো উত্থিত হয়ে মালভূমি গঠন করে। যেমন তিব্বত মালভূমি। এ ছাড়া ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠের ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হওয়ার সময় তাদের মধ্যবর্তী নিম্নস্থান উঁচু হয়েও মালভূমি গঠিত হয়। যেমন ইরানের মালভূমি।
ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়প্রক্রিয়া: সাধারণত প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত এবং উচ্চভূমির কোমল শিলাগুলো বৃষ্টি, নদী, বায়ু প্রভৃতির দ্বারা ক্ষয় হওয়ায় মালভূমির সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন ফিজেন্ড মালভূমি।
লাভা সঞ্চয়: ভূ-অভ্যন্তরের লাভা ভূপৃষ্ঠের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথে ওপরে এসে ছিদ্রপথের চারদিকে জমা হয়ে মালভূমিতে পরিণত হয়। এরূপ মালভূমি ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া, আফ্রিকার ইথিওপিয়া মালভূমি লাভা সঞ্চয়ের ফলেই গঠিত হয়েছে।
মরু মালভূমি: এ ক্ষেত্রে বায়ুতাড়িত বালুকারাশি সঞ্চিত হয়ে মরু মালভূমির সৃষ্টি হয়। সাহারা মালভূমি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
তুষার মালভূমি: বরফ সঞ্চিত হওয়াই মূলত তুষার মালভূমি সৃষ্টির কারণ। যেমন গ্রিনল্যান্ড মালভূমি।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূপ্রকৃতি হচ্ছে মালভূমি। পর্বত থেকে নিচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু খাড়া ঢালযুক্ত ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ সমতলভূমিকে মালভূমি বলে। অবস্থানগত বৈশিষ্ট্যে মালভূমি তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি, পাদদেশীয় মালভূমি ও মহাদেশীয় মালভূমি।
পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি: ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় সংকোচন চাপের কারণে পর্বতের মধ্যবর্তী নিম্নভূমি উঁচু হয়ে যে মালভূমি গঠিত হয়েছে, তাকে পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি বলে। যেমন তিব্বতের মালভূমি।
পাদদেশীয় মালভূমি: উচ্চ পর্বত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এর পাদদেশে তলানি জমে যে মালভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে পাদদেশীয় মালভূমি বলে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো মালভূমি।
মহাদেশীয় মালভূমি: সাগর বা নিম্নভূমি পরিবেষ্টিত বিস্তীর্ণ উচ্চভূমিকে মহাদেশীয় মালভূমি বলে। এ ধরনের মালভূমির সঙ্গে পর্বতের কোন সংযোগ থাকে না। যেমন স্পেনের মালভূমি।
এই অধ্যায়ের প্রকাশিত পূর্বের সৃজনশীল প্রশ্ন