অধ্যায় ২
সৃজনশীল প্রশ্ন
নিচের চিত্র দেখে প্রশ্নের উত্তর দাও
প্রশ্ন
ক. মালভূমি কাকে বলে?
খ. পাহাড় ও পর্বতের বৈসাদৃশ্য লেখো।
গ. উদ্দীপকের ‘ক’ চিহ্নিত অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশের অন্য কোন অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ‘খ’ এবং ‘গ’ চিহ্নিত অঞ্চল দুটির কোনটি মানুষ বসবাসের জন্য বেশি উপযোগী? যুক্তিসহ মতামত দাও।
উত্তর
ক. সমুদ্র সমতল থেকে অতি উচ্চে অবস্থিত বিস্তীর্ণ সমতলভূমিকে মালভূমি বলে।
খ. ৬০০ থেকে ১০০০ মিটার উঁচু স্বল্প বিস্তৃত শিলাস্তূপকে পাহাড় বলে। যেমন ময়মনসিংহের গারো পাহাড়। পক্ষান্তরে ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু সুবিস্তৃত ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। যেমন ভারতের বিন্ধ্য পর্বত। পাহাড় সাধারণত গম্বুজাকৃতি হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে পর্বত দীর্ঘ সংকীর্ণ বা চূড়াবিশিষ্ট হয়।
গ. উদ্দীপকের ‘ক’ চিহ্নিত অঞ্চলটি হলো রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমি যা প্লাইস্টোসিন যুগের অন্তর্গত। আজ থেকে পাঁচ লাখ বছর পূর্বে বরফ যুগের পরোক্ষ প্রভাবের ফলে প্লাইস্টোসিন যুগের ভূপ্রকৃতির সৃষ্টি হয়েছিল।
বাংলাদেশের উত্তর–পশ্চিমাংশের সুবিশাল বরেন্দ্রভূমির সাথে মধুপুর ও ভাওয়াল গড় এবং লালমাই পাহাড়ের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া যায়। বরেন্দ্রভূমির মাটির রং অনেকটা হলুদ থেকে লালচে হলুদ। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল এলাকাকে মধুপুর গড় এবং ঢাকা ও গাজীপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ভাওয়াল গড়ের মাটির রং লাল ও কংকরময়। এ এলাকায় আনারস, কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। আবার কুমিল্লা শহরের ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই পাহাড় অবস্থিত। এখানকার মাটি লাল এবং নুড়ি, বালু প্রভৃতি দ্বারা গঠিত। এ পাহাড়ের পাদদেশে আলু, তরমুজ ইত্যাদির চাষ হয়।
আলোচনা থেকে বলা যায়, বরেন্দ্রভূমির মাটির রং যেমন লাল, তেমনি মধুপুর ও ভাওয়াল গড় এবং লালমাই পাহাড় এলাকার মাটির রং লাল। উপরন্তু, বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চল প্লাইস্টোসিন যুগের চত্বরভূমি।
সুতরাং উক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের ‘খ’ অঞ্চলটি হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ‘গ’ অঞ্চলটি হলো সুন্দরবন। এ দুই অঞ্চলের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মানুষ বসবাসের জন্য বেশি উপযোগী বলে আমি মনে করি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বন্ধুর ভূপ্রকৃতির অঞ্চল হলেও অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ। এখানে কৃষিকাজ হয় ও যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে, যা মানুষের বসবাসের উপযোগী। অপর দিকে সুন্দরবন হচ্ছে একটি বনভূমি এলাকা, যেখানে পশুপাখিসহ বিভিন্ন গাছপালার সমারোহ দেখা যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হলেও এখানে পাহাড়ের গা কেটে কৃষিকাজ করা হয়। এ ধরনের চাষাবাদ পদ্ধতি জুমচাষ নামে পরিচিত। এখানে ধান, চা, আনারস প্রভৃতি ফসল জন্মে। এ ছাড়া পাহাড়ের গায়ে রাবার ও তুলা চাষ করা হয়। এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে। ফলে এখানে নানা ধরনের বসতি দেখা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জলবায়ু, পরিমিত বৃষ্টিপাত প্রভৃতি মানুষের বসবাসের উপযোগী। অপর দিকে সুন্দরবন একটি বনাঞ্চল হওয়ায় এবং এ অঞ্চলে অনেক নদী থাকায় এখানে যাতায়াতব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই কঠিন। এখানকার কৃষিজমিগুলো মূলত জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি প্রবেশের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বনভূমি অঞ্চলে সাধারণত বিভিন্ন পশুপাখি বসবাস করে, যা এদের অনুকূল পরিবেশ। আর গভীর অরণ্যে মানুষের বসবাস করা অসম্ভব। অর্থাৎ সুন্দরবনে মানুষের কৃষিকাজ, যোগাযোগ প্রভৃতি মনুষ্য বসতির নিয়ামকগুলো প্রায় সবই প্রতিকূল।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের ‘খ’ তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, ‘গ’ তথা সুন্দরবনের তুলনায় মানুষ বসবাসের বেশি উপযোগী।
এই অধ্যায়ের প্রকাশিত পূর্বের সৃজনশীল প্রশ্ন