ঈদের পর প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলক শুরু
দেশের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। ইতিমধ্যে মাধ্যমিক স্তরে তা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। প্রাথমিক স্তরেও একই সঙ্গে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তারা এখনো শুরু করতে পারেনি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রাথমিকেও বিদ্যালয় নির্বাচন হয়ে গেছে। ঈদের পর প্রাথমিক স্তরেও পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব।
নতুন শিক্ষাক্রম সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও শুরু থেকেই শেখানোর প্রক্রিয়াটি কেমন হবে, তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শাখার মধ্যে ‘সমন্বয়হীনতা’ চলছিল। এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়, প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ বছরের শুরুতে নির্ধারিতসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। এরপর আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে বাস্তবায়ন শুরু হবে। এভাবে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে এ পর্ব শেষ হবে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। একই সময় থেকে ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতেও পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি। এ অবস্থায় প্রাথমিক স্তরেও পরীক্ষামূলক বাস্তবায়নের সময় জানালেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব।
নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষাক্রমে যেখানে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে সার্বিকভাবে যোগ্য করে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে; সেখানে প্রাথমিকে অ্যাকটিভ লার্নিংয়ের (সক্রিয় শিখন) ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মাধ্যমিকের মতো প্রাথমিকেও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম। প্রাথমিকের সঙ্গে মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমের কোনো পার্থক্য নেই। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দক্ষতাগুলো (কম্পিটেনসি) একই। এটা শুধু স্তরের পার্থক্য। আর ‘অ্যাকটিভ লার্নিং’ ‘ডুয়িং বাই লার্নিং’ এগুলো বিভিন্ন লোক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ভাষায় ব্যবহার করে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার সঙ্গে মিল রেখে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা (বার্ষিক, প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িকী) রাখা হয়নি। এসব শ্রেণিতে শতভাগ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন ধারাবাহিক কার্যক্রমের ওপর। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে (পরীক্ষার মাধ্যমে)। এ দুই শ্রেণির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ের পুরোটাই মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে।