পোশাকে বাংলাদেশই দ্বিতীয়
একক দেশ হিসেবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান দখল করা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে একধরনের অঘোষিত লড়াই চলছে কয়েক বছর ধরে। তবে আপাতত স্বস্তির খবর হচ্ছে, বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানেই আছে। যদিও তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ ২০২০’ প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, চীন বরাবরের মতো তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর দেশটির পোশাক রপ্তানি ৬০০ কোটি ডলার কমে ১৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার হয়েছে। মোট পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা বর্তমানে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে মূলত ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত বছর ইইউর রপ্তানি ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। তবে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক। বাংলাদেশ গত বছর ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের (প্রকৃতপক্ষে ৩ হাজার ৩০৭ কোটি ডলার) পোশাক রপ্তানি করেছে। বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১০ সালে হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম গত বছর ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। চীনের মতো ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর ১০০ কোটি ডলার কমেছে। মোট পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের বর্তমান হিস্যা ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
চীন, ইইউ, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পর পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দশে রয়েছে ভারত, তুরস্ক, হংকং, যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া। এর মধ্যে ভারত গত বছর ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের হিস্যা সাড়ে ৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে শীর্ষ দশ দেশ ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানির অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। করোনায় ইইউর বাজার পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সেটি শ্লথ হচ্ছে। ফলে আশা করছি, আগামী দুই বছরেও ভিয়েতনাম আমাদের পেছনে ফেলতে পারবে না। তারপরও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, উৎপাদনসক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বহুমুখী পোশাক উৎপাদনে জোর দিতে পারলে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে।
ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক আমদানিতে ইইউ সবার চেয়ে এগিয়ে। গত বছর ইইউর দেশগুলো ১৮ হাজার কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। তারপরেই যুক্তরাষ্ট্র, আমদানি করেছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপান ৩ হাজার কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, কানাডা ১ হাজার ১০০, কোরিয়া ১ হাজার ১০০, চীন ৯০০, রাশিয়া ৮০০ ও সুইজারল্যান্ড ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে।
পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও বস্ত্র বা কাপড় রপ্তানিতে শীর্ষ দশে নেই বাংলাদেশ। পোশাকের মতো এখানেও চীনের রাজত্ব। গত বছর চীন ১২ হাজার কোটি ডলারের বস্ত্র রপ্তানি করেছে। রপ্তানিতে না থাকলেও কাপড় আমদানিতে শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশে ১ হাজার কোটি ডলারের কাপড় আমদানি হয়েছে।