করোনায় কাবু মসলার বাজারও
প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারের মুদি দোকানগুলোতে মসলার ক্রেতা অনেক বেড়ে যায়। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এই বাজারের লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বললেন, মানুষের হাতে টাকা কম। তাই পশু কোরবানিও কম হবে। এ কারণে মসলার চাহিদা ততটা নেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশ ও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার যে করুণ দশা তৈরি করেছে, তার ছাপ পড়েছে মসলার বাজারে। জরুরি নিত্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। মসলার বাজারে স্বস্তি থাকলেও ক্রেতা কম। আবার নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতা থাকলেও দাম নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। প্রতি কেজি আলুর দাম ৩৫ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি বলে জানাচ্ছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। আর ডিমের হালি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি।
স্বস্তি নেই চাল, ডাল ও সবজির বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এখন বেশির ভাগ সবজির কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তবে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম কম। পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও আদা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারের বিক্রেতা নজরুল ইসলামের দোকানে প্রতি ১০০ গ্রাম জিরা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, এলাচ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গোলমরিচ ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং লবঙ্গ ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে (১০০ গ্রাম হিসাবে) বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কম নিলে এক দাম, বেশি নিলে আরেক দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ঈদের আগে মসলার আমদানি অনেকটাই বেড়েছে। যেমন গত জুন মাসে দেশে জিরা আমদানি হয়েছে এর আগের মে মাসের তুলনায় তিনগুণ। এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচ ও লবঙ্গের ক্ষেত্রেও আমদানি এভাবে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে। তবে গত বছরের জুন মাসে দেশে জিরা আমদানি হয়েছিল ৫ হাজার ১৫ টন। এই জুনে আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৮০ টন। আর গত বছরের এপ্রিল, মে ও জুন—এই তিন মাসে জিরা আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৭০৮ টন। আর চলতি বছরের একই সময়ে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৫১৫ টন।
একইভাবে গত বছরের ওই তিন মাসে এলাচের আমদানি হয় ১ হাজার ৪৮০ টন। এ বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪৪২ টন।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের মকিম কাটারার পাইকারি দোকানগুলোতে ভারতীয় জিরা কেজিপ্রতি মানভেদে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, ইরান ও সিরিয়ার জিরা ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বেশি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের এলাচের কেজি আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, চীনা দারুচিনির কেজি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা, ভিয়েতনামের দারুচিনি ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা, গোলমরিচ ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা এবং লবঙ্গ ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মকিম কাটারার পাইকারি দোকান রুবেল ট্রেডার্সের মালিক মো. রুবেল বলেন, গত ঈদুল ফিতরের চেয়ে এবারের ঈদুল আজহায় মসলার দাম অনেক কম। বাজারের বিক্রি পরিস্থিতিও খুব খারাপ। ব্যবসায়ীরা এবার পুঁজি ঘরে তুলতে পারছে না। তিনি বলেন, এবার ভারতীয় জিরা ২৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এটা গত ঈদুল ফিতরে ছিল ৩৪০ টাকা।
বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতি গত ৯ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ঈদুল আজহার আগপর্যন্ত মসলার মূল্যবৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই।
বিক্রেতারা বলছেন, আগে যাঁরা ঈদের সময় আধা কেজি জিরা কিনতেন, এখন তাঁরা আড়াই শ বা ১০০ গ্রাম কেনেন। রাজধানীর কাজীপাড়া বাজার থেকে গতকাল ঈদের জন্য মসলা কিনেছেন ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসায়ী মামুন-উর-রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কমবেশি সবার অবস্থাই খারাপ। এখন ফাও (অযথা) খরচ করা যাবে না।