করোনায় গরম মসলার বাজার ঠান্ডা
ঈদুল আজহার আগে প্রতিবছর গরমমসলার চাহিদা বেশি থাকে। পাইকারি থেকে খুচরা বাজার—সবখানেই বেচাকেনা বেশি হয়। করোনার কারণে এবার ঠিক উল্টো চিত্র মসলার বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে পড়তি দর এবং চাহিদা কমায় পাইকারি বাজারে মসলার দাম কমছে।
গরমমসলা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। করোনার কারণে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে দাম পড়ে গেছে মসলার। ঠিক একই কারণে দেশেও ব্যবহার কমেছে। দেশে গরমমসলা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সামাজিক ও করপোরেট অনুষ্ঠান এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয়। করোনায় এসব খাতে মসলার চাহিদা নেই। আবার চাহিদা কমলেও আমদানি কমেনি। পর্যাপ্ত মজুত থাকায় বিক্রি করে বাজার থেকে বের হতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এতে দাম পড়ছে।
বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ প্রথম আলোকে বলেন, রোজার ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে তাঁদের সংগঠন থেকে দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই দামের চেয়েও অনেক বেশি কমেছে মসলার দাম। ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাহিদা থাকলেও দাম বাড়বে না। কারণ, মসলার পর্যাপ্ত মজুত আছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে আট ধরনের গরমমসলা বেচাকেনা হয়। এগুলো হলো এলাচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জায়ফল,
জয়ত্রী ও তারকা মৌরি বা তারা মসলা। এই মসলার ৮২ শতাংশই আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয় কমবেশি ১৮ শতাংশ।
সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গরম মসলা আমদানি হয় ৫১ হাজার ৮৯৪ টন। শুল্ককরসহ এসব মসলার আমদানিমূল্য পড়েছে ১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। পাইকারি বাজারে এই মসলা বেচাকেনা হয় তিন হাজার কোটি টাকায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় মসলার আমদানি প্রায় এক শতাংশ বেড়েছে।
মসলার দরদাম
আট ধরনের গরমমসলার মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো এলাচ। করোনার আগে পাইকারি বাজারে এই মসলার কেজিপ্রতি দাম ওঠে প্রায় চার হাজার টাকা। গত মাসে তা ২ হাজার ৮০০ টাকায় নেমে আসে। এখন আরও কমে মানভেদে ২ হাজার ৪২০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাচের ৯৯ শতাংশই আমদানি হয় গুয়াতেমালা থেকে। প্রায় অর্ধেকের মতো দাম কমার কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পড়তি দাম। আবার এবার ভারত থেকেও কিছু পরিমাণ এলাচ আমদানি হচ্ছে। ফলে বাজার এখনো পড়তির দিকে। বন্দর দিয়ে গত অর্থবছরে ২ হাজার ৬৫০ টন এলাচ আমদানি হয়।
>আন্তর্জাতিক বাজারে পড়তি দর ও চাহিদা কমায় পাইকারি বাজারে মসলার দাম কমছে
ঈদুল আজহায় দাম বাড়বে না
গরমমসলার মধ্যে পরিমাণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় জিরা। জিরার সিংহভাগই আমদানি হয় ভারত থেকে। এই পণ্যেরও দাম কেজিপ্রতি ৩৩০ টাকা থেকে কমে ২৫৫-২৬০ টাকায় নেমেছে। গত অর্থবছরে ২৪ হাজার টন জিরা আমদানি হয় বন্দর দিয়ে।
গোলমরিচের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা কমে ২৬০ টাকায় নেমেছে। বাজারে ভিয়েতনামের গোলমরিচই বেশি। মোট আমদানির প্রায় ৬১ শতাংশ এই দেশ থেকে আসে। ভারত, মাদাগাস্কার, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি হয় ৩৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে পণ্যটি ১ হাজার ৫৮ টন আমদানি হয়, যা এক বছর আগের তুলনায় ৪৩৪ টন বেশি।
করোনায় লবঙ্গের চাহিদা বেশি। রান্না ছাড়াও চা পানে লবঙ্গ ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি। এরপরও পণ্যটির দাম কমছে। কেজিপ্রতি ৬২০ টাকা থেকে নেমে ৫৫০ টাকায় এসেছে দাম। ব্রাজিল, মাদাগাস্কার, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে লবঙ্গ। পণ্যটি আমদানি হয়েছেও বেশি। গত অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ টন।
দারুচিনি আমদানি হয় চীন থেকে। গত অর্থবছর শেষে মসলাটির আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার টন। চীন থেকে আমদানি করা দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৬০ টাকায়। এক মাস আগেও ছিল ৩০০ টাকা। এ ছাড়া জায়ফল, জয়ত্রী ও তারা মসলার দামও সামান্য কমেছে।
মসলা আমদানিকারক ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গরমমসলার বাজার এখন আর গরম নেই। চার মাস ধরে বিয়ে, মেজবান, করপোরেট অনুষ্ঠান হচ্ছে না। রেস্তোরাঁ খুললেও আগের মতো চাহিদা নেই। আবার ঈদুল আজহায় অনেক মানুষ কোরবানি করবে কি না, তা–ও নিশ্চিত নয়। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন লোকসানে বিক্রি করছেন।