'যুক্তরাষ্ট্র-চীন স্নায়ুযুদ্ধ করোনার চেয়েও উদ্বেগের'
আমেরিকা ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ জেফরি সাকস। বিবিসি অনলাইনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেফরি বলেন, করোনা মহামারির পরিণতিতে নেতৃত্বহীন এক বিশাল বাধায় পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। দুই পরাশক্তির মধ্যে বিভাজন এটিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক দুই দেশের বৈরিতার জন্য মার্কিন প্রশাসনকেই দুষছেন। বিবিসির এশিয়া বিজনেস রিপোর্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মার্কিন শক্তি বিভাজনের জন্য, সহযোগিতার জন্য নয়।
জেফরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা চালাছে।যদি তারা এমনই করে, এভাবেই শক্তি ব্যবহার করে, তবে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাব না।প্রকৃতপক্ষে আমরা আরও বড় বিতর্ক এবং বড় বিপদে পড়ব।
কেবল বাণিজ্য নয়, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক। চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জিনজিয়ান প্রদেশে মুসলমানদের দমনপীড়নের জন্য দায়ী চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অনুমোদনের আইন স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার উপায় হিসাবে চীন ভাইরাসটির আন্তর্জাতিক বিস্তারে প্রভাব ফেলেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন চীনা কোম্পানিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। বিশেষত, চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়েকে। ওয়াশিংটন অভিযোগ, মার্কিন নাগরিকদের ওপর বেইজিংয়ের গুপ্তচরবৃত্তিতে সাহায্য করেছে হুয়াওয়ে। চীন ও হুয়াওয়ে উভয়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে এই গুমর কিছুটা ফাঁস করে দিয়েছেন মার্কিন সাবেক জাতীয় সুরক্ষার উপদেষ্টা জন বোল্টন। তাঁর লেখা এক বইয়ে বলা হয়, চীন ও হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান সম্ভবত পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য একটি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।
জেফরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ফাইভ-জি নিয়ে তার অবস্থান হারায়, যা নতুন ডিজিটাল অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যদিকে হুয়াওয়ে বিশ্ববাজারে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছিল। আমার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করেই বিশ্বব্যাপী সমালোচনা ছড়িয়েছিল যে হুয়াওয়ে হুমকিস্বরূপ। মিত্রদেশগুলোর সঙ্গেও তারা হুয়াওয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা চালায়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ নয় যে চীন সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এই সপ্তাহে ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সহিংসতায় কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। চীন আবার ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সক্রিয়ভাবে অর্থায়ন করে আসছে। যা দিল্লির মধ্যে এক শঙ্কার সৃষ্টি করেছে যে, এই অঞ্চলে হয়তো তাদের আধিপত্য থাকবে না।
জেফরি স্বীকার করেছেন, এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য চীনের উত্থান উদ্বেগের বিষয়। বিশেষত, তা যদি শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক উপায়ে না হয়। তবে চীন কোনো উপায়ে কী করবে, তা এখন তাদের হাতে নির্ভর করছে বলে মনে করেন জেফরি।