লে-অফ করা কারখানা ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলের অর্থ পাবে না
লে-অফ ঘোষণা করা শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্রমিক-কর্মচারীর মজুরি পরিশোধে সরকারের ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে কোনো সহায়তা পাবে না।
এ ছাড়া প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসএমইর জন্য গঠিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে চলতি মূলধন বাবদ ঋণ নিতে পারবে, যা দিয়ে তারা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংককে এক চিঠিতে এই মতামত দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য সরাসরি রপ্তানি করে, তাদের ঋণপত্র বা এলসি পরীক্ষা সাপেক্ষে শুধু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে।
সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহায়তা ঘোষণার পরও পোশাকশিল্পের মালিকেরা গণহারে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করতে শুরু করেন। এতে যেসব শ্রমিকের চাকরির বয়স এক বছরের কম, তাঁরা লে-অফ কালীন কোনো মজুরি পাবেন না। অন্যরা কেবল মূল মজুরির অর্ধেক ও বাড়ি ভাড়া পাবেন। অন্য কোনো ভাতা পাবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা লে-অফ ঠেকাতেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। পরে ৫ এপ্রিল অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নতুন আরও চারটি প্যাকেজে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থ মন্ত্রণালয় ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশনা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ২ এপ্রিল একটি নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, সচল কারখানা এপ্রিল, মে ও জুন মাসের শ্রমিকের মজুরি দিতে তহবিল থেকে ঋণ পাবে। যেসব কারখানা গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের শ্রমিকের মজুরি নিয়মিত দিয়েছে, তারা সচল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। ঋণ পেতে ওই তিন মাসের রপ্তানি কার্যক্রমও থাকতে হবে। ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সুদ নেবে না। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল নিতে পারবে। এই ঋণের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে ২ বছরের মধ্যে শোধ করবে ব্যাংকগুলো। এ জন্য প্রথম ৬ মাস ঋণ পরিশোধে বিরতি পাবে প্রতিষ্ঠান, পরের ১৮ মাসে ১৮ কিস্তিতে টাকা শোধ দিতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, মজুরির টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে (এমএফএস) পাঠিয়ে দেবে ব্যাংক।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানায়, সচল রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের মজুরি দিতে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে কোনোভাবেই কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া যাবে না। আগের নীতিমালায় বিষয়টি স্পষ্ট না থাকায় ৮ এপ্রিল নতুন করে এই নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন মতামতে তহবিল থেকে শ্রমিকের পাশাপাশি কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার মতামত দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন মতামতের বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর কোনো নেতাই আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, একের পর এক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করা হলে শ্রমিকদের মজুরি না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে। কারণ, ৮০-৯০ শতাংশ পোশাক কারখানা ইতিমধ্যে লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রোববার মতামতটি বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।